অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেক Annapurna base camp trek

৩য় দিন – ঘান্দ্রুক ( ২০২০ মিঃ ) থেকে চমরং ( ২১৭০ মিঃ )

ঘান্দ্রুক

শুরুতে অনেকে দেখে ভাবতে পারে যে আজকে অনেক আরামের দিন, ২০২০ থেকে মাত্র ২১৭০ মিঃ উপরে উঠতে হবে। আমিও তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু যখন চন্দ্র দা বললেন যে এই রাস্তা যেতে ৭ ঘণ্টা লাগবে, সব আনন্দ উড়ে গেল। সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার টা হল যে আজ শুরুতে আমাদের প্রায় ৭০০ মিঃ নিচে নামতে হবে, তারপর আবার আরেকটি পাহাড়ে উঠতে হবে। এইদিকে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পা নাড়াতে পারছিনা , ২ পায়ের উরুর অংশ যেন অবশ হয়ে আছে, আর প্রতি কদম নিতে গেলে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। কাওকে কিছু বললাম না, গাইডকে বললাম আমি ঠিক আছি, সামান্য একটু ব্যথা আছে শুধু।
এইদিন সকালে অটোমেটিক ৬ টার সময় ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। গতকাল হোটেলে (অনেকে টি হাউজ ও বলে এগুলোকে) পৌঁছেছিলাম সন্ধ্যা ৭ টায়, তাই আশে পাশের কিছুই সেইভাবে দেখতে পারি নাই, তার উপর ছিল মেঘে ঢাকা। কিন্তু সকালে বারান্দায় এসে ভিউ দেখে মনটাই ভালো হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর মেঘ সরে গেলে দূরে অন্নপূর্ণা সাউথ পিকের একটা অংশ দেখতে পেলাম।
সকালের সূর্যের আলো যখন পাহাড়ের উপর জমে থাকা বরফের উপর পড়ে , তার সৌন্দর্য লিখে প্রকাশ করার মতো কোনও ভাষা আছে কিনা আমার জানা নাই। এমনকি ক্যামেরাতেও তার ছিটে ফোঁটা ধরা পড়ে না। একটু পরেই দেখা দিল আমার প্রিয় “মচ্ছ পুচ্ছেরে”। ইংরেজিতে এটাকে “ফিস টেইল” ও বলা হয়ে থাকে। পাহাড়ের পিক টা অনেকটা মাছের লেজের মতো দেখতে বলে তার এই নাম।
ফিশ টেইল মচ্চপুচ্ছেরে Fish tail Machapuchere

ফিশ টেইল

Annapurna south, Ghandruk অন্নপূর্ণা সাউথ, ঘান্দ্রুক

আজ সামনের এই পাহাড়ে উঠতে হবে, দূরে অন্নপূর্ণা সাউথের একটু অংশ

নাস্তা করে শুরু হল আমাদের চমরং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা। বড় বড় পাথর দিয়ে বানানো সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলাম। এইভাবে আমাদের নামতে হবে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। আগের দিন সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে, পানিতে তে ভিজে পাথর গুলো পিচ্ছিল হয়ে আছে। তারই একটাতে আমার ট্রেক এর প্রথম আছাড় টা খেলাম। কপাল ভালো যে কোমর বা পায়ের কোথায় লাগে নাই,কিন্তু হাতের তালুর কাছে ছোট একটা অংশ সামান্য গভীর ভাবে কেটে গেল।
ব্যান্ডেজ করে আবার হাটা শুরু করলাম, কিন্তু আছাড় খেয়ে আমার কনফিডেন্স গেছে কমে। তাই প্রতিটা পাথরে সাবধানে পা ফেলছিলাম, তাতেও যে কয়েকবার পা পিছলায় নি তা না,কিন্তু পড়ে যাইনি আর। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম রাস্তায় একটু পর পর রক্তের ফোঁটা। প্রথমে কয়েকবার ইগনোর করলাম, ভাবলাম আমার মতো কেও হয়তো পড়ে গিয়েছিল।
কিন্তু যত সামনে আগাই, রক্তের পরিমাণ আরও বাড়তে লাগলো, ভয় পেয়ে গেলাম। উত্তর পেতে বেশি সময় লাগলো না। চার পাঁচটা ঘোড়া দেখালাম মাল পত্র নিয়ে আমাদের উলটো পথ ধরে আসছে, তাদের প্রত্যেকটার শরীরে ইয়া বড় বড় ১০ ১২ টা করে জোঁক। জোঁক রক্ত খেয়ে পড়ে যাচ্ছে আর তাদের ক্ষত স্থান থেকে রক্ত ফোটায় ফোটায় রাস্তায় পড়ছে। দেখে ভয় পেয়ে গেলাম, চন্দ্র দাকে জিজ্ঞাস করলাম সামনে জোঁক আছে কিনা। উনি বললেন “ হেয় না, বহুত হেয়, ইধার বারিশ হো রে হেয় না, ইস লিয়ে”।
আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম, একে তো ভিজা পাথর আর কাদার উপর দিয়ে পাহাড় থেকে নামা এক বিশাল ঝামেলার কাজ, তার উপর আবার জোঁকের উপদ্রব। মনে মনে আল্লাহর নাম নিয়ে হাটতে থাকলাম।
চমরং নেপাল Chomrong Nepal

চন্দ্রদার সাথে নোমান

আর কিছুদূর নামার পর আমরা পেলাম আমাদের প্রথম ব্রিজ। পাহাড়ি নদীর উপর দিয়ে কেবল দিয়ে বানানো ঝুলন্ত ব্রিজ। ট্রেকিং এ যাওয়ার আগেই ইন্টারনেটে এগুলোর ছবি দেখে খুব এক্সাইটেড ছিলাম। অবশেষে সামনা সামনি দেখতে পেরে খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। এখানে কিছু ফট সেশন করে আমরা আবার চলতে লাগলাম।
ঝুলন্ত ব্রিজ Hanging Bridge

ঝুলন্ত ব্রিজ

ঝুলন্ত ব্রিজ Hanging Bridge

ঝুলন্ত ব্রিজ

এইরকম ব্রিজ পথে আরও কয়েকটা পড়বে। ব্রিজ পার হওয়ার পর শুরু হলো আবার উঠে যাওয়া। সিঁড়ির পর সিঁড়ি উঠতে থাকলাম। এতক্ষণ নামছিলাম তাই খেয়াল করি নাই, কিন্তু উঠা শুরু করা মাত্র আমার পা জানান দিতে শুরু করল যে তার অবস্থা খারাপ। প্রতিটা স্টেপ আমার কাছে ছিল টর্চারের মতো। কিন্তু চুপ চাপ দাঁতে দাঁত চেপে উঠতে থাকলাম।
নোমান আর গাইড আমার চেয়ে দ্রুত উঠে যাচ্ছিল। আমি চেষ্টা করলাম আস্তে আস্তে কিন্তু না থেকে উঠে যেতে। ভয় ছিল যে পায়ের উপর বেশি প্রেশার দিলে যদি বড় কোনও কিছু হয়, সে ক্ষেত্রে ট্যুর টাই মাটি হয়ে যাবে। আমি একটু পর পর ২ মিনিট বিরতি নিয়ে চলতে থাকলাম। ধীরে ধীরে মেঘের মধ্যে প্রবেশ করলাম আমরা।
মেঘ আর বৃষ্টি দুইটাই আমার খুব পছন্দের জিনিস, কিন্তু এই ট্যুরে সবচেয়ে বিরক্তির কারণ ছিল এই দুই জনই। দূর থেকে পাহাড়ে মেঘ আটকে থাকা দেখতে খুবই ভালো লাগে, কিন্তু মেঘের ভিতরে চলে গেলে সব শেষ, আশে পাশে কিচ্ছুটি দেখা যাবে না। চারিদিকে শুধু সাদা আর সাদা, অন্ধের মতো রাস্তা ধরে শুধু হেটে যাওয়া। আর ঠাণ্ডা তো আছেই।
যতই উপরে উঠছি ধীরে ধীরে ঠাণ্ডাও বাড়ছে। পাহাড় বাওয়ার সময় ঠাণ্ডা খুব একটা টের না পাওয়া গেলেও, যখন বিশ্রাম নেয়ার জন্য দাড়াই, সাথে সাথে হাত পা জমে যাওয়া শুরু করে। তাই একবারে খুব বেশি সময় দাঁড়ানো ঠিক না, মাসল ঠাণ্ডা হয়ে গেলে সমস্যা। তাই আমরা ছোট ছোট ব্রেক নিয়ে এগুতে থাকি।
মেঘের ভেতরে Annapurna base camp trek অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেক

মেঘের ভেতরে

প্রায় ঘন্টাখানেক পাহাড়ে উঠার পর আমরা একটা জায়গায় রেস্ট নিয়ে আবার আমাদের শুরু হল নিচে নামা। ইতোমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে জোরেশোরে। আমরা রেইন কোট লাগিয়ে নামা শুরু করলাম। এবারের রাস্তাটা খুবই বাজে। প্রায় খাড়া নিচে নামতে হচ্ছে, বৃষ্টির কারণে মাটি পিচ্ছিল হয়ে আছে। আর আশে পাশে প্রচুর বড় বড় গাছ, চন্দ্র দা বলল এখানে কখনো নাকি সূর্যের আলো পড়েনা, এতো ঘন জঙ্গল। আর এ জন্য এটা হচ্ছে জোঁকদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা।
আমরা একটু পর পর আমাদের পা আর জুতা চেক করতে লাগলাম জোঁকের জন্য। কিছুক্ষণ পর নোমান বলল তার জুতায় কয়েকটা জোঁক। শুনে আমি তাড়াতাড়ি আমার জুতার দিকে তাকালাম, দেখে তো আমার আক্কেল গুড়ুম। দুই জুতায় প্রায় দশ পনেরটা জোঁক কিলবিল করছে। হাতের ট্রেকিং পোল দিয়ে একটা কে ফালাইতে ফালাইতে দেখলাম আরও পাঁচটার মতো উঠে পড়ল। পুরা হলিউড মুভির জোম্বিদের মতো একটার পর একটা উঠতে লাগল।
বুঝলাম এই এলাকা জোঁক দিয়ে ভরা, এইভাবে দাঁড়ায় থাকলে জীবনে ফালায় শেষ করা যাবেনা। নোমানকে বললাম দৌড় দিয়া সামনে কোনও ফাকা জায়গায় যাইতে। কিন্তু নোমান ভয়ে আর নড়ে চড়ে না। শেষে তাকে টান দিয়ে দৌড় দিয়ে একটু দূরে একটা বড় পাথরের উপর দাঁড়ালাম। গাইড আর আমি মিলে হাত দিয়ে টান টান দিয়ে সব গুলাকে ছাড়ালাম। নোমান বেচারা আবার হাঁতে ধরে ফালানোর সময় একটা জোঁক তার হাঁতে কামড় দিয়ে বসে, অর হাত দিয়ে রক্ত পড়তে লাগল।
এরপর থেকে আমার হয়ে গেল জোঁক ফোবিয়া, প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর পা চেক করি, আর শরীরে কোথায় একটু চুলকানি বা অন্যরকম ফিলিংস হলে সাথে সাথে চেক করে দেখতাম জোঁক কিনা। এই জোঁকের রাজ্য দিয়ে আমরা প্রায় দুই ঘণ্টার মতো শুধু নামতেই থাকি। এর মাঝে আরও কয়েকবার পায়ে জোঁক ধরেছিল, কয়েকটা আবার আমার রেইনকোট বেয়ে গলা পর্যন্ত চলে এসেছিল। দুই ঘণ্টা পর আমরা পাহাড়ের একদম নিচে চলে আসলাম।
পাহাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাছে ‘কুমরং খোলা’ নদী। গাইডকে বললাম এরপর কোথায় যেতে হবে? সে সামনের পাহাড় দেখিয়ে বলল, ‘ইয়ে যো পাহাড় হেয় না, উসকা টপ মে যায়েঙ্গে হাম লোগোনে’। আমি মনে মনে বললাম ‘টপ কাহা হে ভাই?’ , কারণ পাহাড়ের পিক মেঘের জন্য দেখাই যাচ্ছিল না, আমি দেখলাম অনেক উপরে মেঘ, তারও উপরে আমাদের হেটে হেঁটে উঠতে হবে। দেখে দমে গেলাম। নোমান কে বললাম, ‘মামা, আমার যেই অবস্থা, আমি বুঝতেসিনা এতো উপরে উঠতে পারব কিনা’। নোমান সাহস দিল,কিন্তু তাতে কোনও কাজ হল কিনা বুঝলাম না।
Annapurna Base camp trek Nepal অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেক

এই পাহাড়ের একদম চূড়ায় উঠে যেতে হবে আমাদের

নদী পার হয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার উঠা শুরু করলাম। একটু পর যা শুরু হল তার কাছে এতক্ষণ যে পেইন খেতে খেতে আসছি তা নস্যি মনে হতে লাগল। প্রায় খাড়া আমরা উঠতে লাগলাম, পুরো ট্রেক এ আর কোনোদিন একটানা এতক্ষণ এতো খাড়া উঠতে হয়েছে কিনা বলে আমার মনে পরে না। নোমান এর মতো শক্ত ছেলেরও দম শেষ হয়ে যেতে লাগল। আমি ১ মিনিট উঠি তো ১ মিনিট রেস্ট নেই, এইভাবে উঠতে লাগলাম। এছাড়া আমার কোনও উপায় ছিল না। আমার মনে হচ্ছিল ফুসফুস বুঝি ফেটে যাবে, শ্বাস নিতে পারতেসিলাম না। আর হার্ট যেভাবে বিট করতে লাগল, নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম।
এর মাঝে একটু পর দেখলাম ২ বুড়া বুড়ি আর তার সাথে এক ছেলে ( মনে করলাম তাদের ছেলে হবে হয়তো ) , আস্তে আস্তে উঠছে। মনে মনে এই ভেবে শান্তি পেলাম যে যাক, আমার চাইতেও স্লো লোক এই এলাকায় আছে :p । জানি না কতক্ষণ পর, আমার কাছে মনে হচ্ছিল অনন্তকাল পরে গাইড বলল যে আমরা চুড়ায় উঠে গেছি, একটি হোটেল দেখিয়ে বলল এইখানে আমরা দুপুরের খাবার খাব। মনে হল তারে কোলে তুলে নাচি, কিন্তু নাচার সামর্থ্য কই। ধাপ করে একটা চেয়ার বসে পড়লাম। গায়ের গেঞ্জি আর প্যান্ট ঘামে ভিজে জব জব হয়ে গিয়েছিল। গেঞ্জি খুলে নেড়ে দিলাম একটু শুকানোর জন্য। আমাকে খালি গায়ে পেয়ে নোমান কিছু সেন্সরড ছবি না তুলে পারলো না।
আমাদের সাথে কিছুক্ষণ পর ৩ জন মেয়ের আরেকটি গ্রুপ এসে জয়েন করল। এদের একজন ফ্রান্স,একজন কানাডা আর একজন নিউজিল্যান্ড থেকে এসেছে।
Annapurna Base camp trek Nepal অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেক

বাম পাশের জন নিউজিল্যান্ডের আর ডান পাশের জন ফ্রম কানাডা

তাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করতে করতে বুড়া বুড়ির গ্রুপ চলে আসল। তাদের সাথে কথা বলে জানলাম, তারা অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে। বয়স্ক লোকের নাম ইয়ান, বয়স ৬৩ বৎসর, সাথে তার বউ এলিসন, ৬০ বৎসর বয়স। সাথের কম বয়সী ছেলেটা তাদের ছোট ছেলে ডেভিড। এই বয়সে আমাদের দেশের লোকের মৃত্যুর জন্য দিন গুনে, আর তারা সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে চলে এসেছে পাহাড় বাইতে। মন থেকে রেস্পেক্ট চলে আসল।
তারা ২০১১ তে আগেও একবার এসেছিল, সেবার অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প থেকে ব্যাক করার সময় পাহাড় থেকে পড়ে যেয়ে এলিসনের হাত ভেঙ্গে যায়। এবার তারা আবার এসেছে তার ছেলে কে নিয়ে। অনেক গল্প হল তাদের সাথে, একবারের জন্যও মনে হয়নি যে আমি ৬৩ বৎসরের এক বৃদ্ধের সাথে কথা বলছি, মনে হচ্ছিল যেন কোনও প্রাণোচ্ছল তরুণ। এই লোক আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল যে ‘ এজ ইজ জাস্ট এ নাম্বার’। তাদের সাথে আমাদের অনেক ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। ডেভিডের সাথে আমার এখনো যোগাযোগ হয়। ইচ্ছা আছে কোনোদিন অস্ট্রেলিয়া গেলে তার সাথে দেখা করে আসার। 
Annapurna Base camp trek Nepal অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেক

বাম দিক থেকে ইয়ান, ডেভিদ,আমি , এলিসন আর নোমান

কথা বলতে বলতে লাঞ্চ করতে লাগলাম, তারা শুধু বিশ্রামের জন্য থেমেছিল। তাই তারা আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ট্রেকিং শুরু করল। আমরাও তার ১০ মিনিট পর আবার শুরু করলাম। এবারের ট্রেকিং অনেকটাই সহজ ছিল। বেশিরভাগই অল্প খাড়া রাস্তা, মাঝে মাঝে একটু বেশি খাড়া, তাও খুব বেশি না। এর মধ্যে আমরা অস্ট্রেলিয়ান ফ্যামিলিকে ক্রস করে ফেললাম। আমরা যে যায়গায় লাঞ্চ করলাম তার নাম ছিল কুমরং খোলা। সেখান থেকে চমরং পর্যন্ত ট্রেক ছিল অসম্ভব সুন্দর। আমাদের পাহাড়ের পাশ দিয়ে হাঁটছি, আর আমাদের নিচে মেঘ। এতদিন মেঘ দেখেছি মাথা উঁচু করে, আজ দেখছি নিচে তাকিয়ে, অনুভূতিটাই অন্যরকম। তাই কিছু ফটো সেশন হয়ে গেল এই ফাঁকে।
প্রায় এক ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম চমরং। সেখানে আমরা ফিশটেইল লজে উঠলাম। তখন বাজে বিকাল সাড়ে চারটার মতো। তাই আজকে আশে পাশের ভিউ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। আমি আর হোটেলের রুমে গেলাম না, গাইডকে কে দিয়ে ব্যাগটা রুমে পাঠিয়ে হোটেলের সামনে বসে ভিউ উপভোগ করতে লাগলাম। আমাদের সামনেই দেখা যাচ্ছিল অন্নপূর্ণা সাউথের একটা অংশ। বীর দর্পে সবার উপর মাথা উঠিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
Annapurna Base camp trek Nepal অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেক

বাম পাশের পাহাড় থেকে পুরোটা নেমে ঐ দূরের নদী পার হয়ে আবার উঠতে উঠতে এই পর্যন্ত আসা

সন্ধ্যার পর গোসল শেষ করে আমরা ডাইনিং এ গেলাম। এখানে ট্রেক করতে আসলে চেষ্টা করবেন ডাইনিং এ চলে যেতে সন্ধ্যার পর। সেখানে দেখবেন বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন মানুষ এসে মিলিত হয়েছে ট্রেক করতে। চেষ্টা করবেন তাদের সাথে পরিচিত হতে। আমরা ডাইনিং এ যেয়ে পরিচিত হলাম এক কোরিয়ান ও একজন ডাচ এর সাথে। তারা একাই চলে এসেছে ট্রেক করতে। ডাচের সাথে নোমান নেদারল্যান্ড এর ফুটবল নিয়ে অনেক জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করল। সেদিন আবার ছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ম্যানচেস্টার ডার্বি, নোমান ডাইনিং এর টিভি রিমোট ধারী লোককে অনেকক্ষণ ধরে বোঝানোর চেষ্টা করল যে ভাই চ্যানেল টা চেঞ্জ করে অমুক চ্যানেলে দেন। কিন্তু ঐ লোক কিছু বুঝে না। ব্যর্থ হয়ে আমার পাশে বসে গজ গজ করতে লাগল। বেটা ইচ্ছা করে না বোঝার ভান করল কিনা তাই বা কে বলতে পারে, কারণ সে তখন স্প্যানিশ লীগ দেখছিল 😛
চমরং অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেক Annapurna base camp Trek

চমরং এ ফিশটেইল লজ থেকে তোলা, অন্নপূর্ণ সাউথের কিছু অংশ

কিছুক্ষণ সবার সাথে গল্প গুজব করে চলে আসলাম রুমে ঘুম দিতে। আগামীকাল ট্রেক করতে হবে প্রায় ৯ ঘণ্টা, চন্দ্র দা বললেন ট্রেকের সবচেয়ে কঠিন দিন কালকে। সো শরীর ফ্রেশ থাকাটা জরুরি। উপরের ছবিতে যে পাহাড় টা দেখছেন, হোটেল থেকে অনেক খানি নিচে নেমে যেয়ে আবার এই পাহাড় টা উঠতে হবে আগামীকাল । আমি আরও চিন্তিত হয়ে পড়লাম, কারণ সময়ের সাথে সাথে আমার পায়ের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।
লেখা ভালো লাগলে নিচে লাইক বাটনে ক্লিক করে শেয়ার করুন

পরবর্তী লেখা গুলোর আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেকে র অন্য লেখা গুলো

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।