টাইগার্স নেস্ট, ভুটান ভ্রমন (২য় পর্ব )
পারো এবং টাইগার্স নেস্ট
পারো
পারো তে উঠেছিলাম হোটেল পেলজরলিং এ। হোটেলে ব্যাগ টেগ রেখে চলে গেলাম সিম কিনতে আর একটু শহর টা একটু ঘুরে দেখতে। শহর বললে ভুল হবে, ছোট্ট একটা জায়গা, এমাথা থেকে ওমাথা হেটে যেতে ১০ মিনিটও লাগেনা। এর মাঝে কিছু দোকানপাট, বাড়িঘর আর কিছু হোটেল।
এখানে আসার সময় কয়েক জায়গায় বাড়িঘরে দেখলাম অদ্ভুত রকমের কিছু চিত্রকর্ম, লম্বা একটা দন্ড, দন্ডের মাথায় চোখ, অনেকের আবার হাত, গলায় মালাও আছে। নিচে আবার দুইটা গোলাকার কিছু। জিনিসটার আকার অনেকটা পুরুষাঙ্গের সাথে মিলে যায় দেখে আমি আর সাব্বির এটা নিয়ে কিচ্ছুক্ষণ হাসাহাসি করলাম। হয়তো অন্য কিছু আঁকতে যেয়ে ভুলে এরকম হয়ে গেছে। অন্তত এই জিনিসের হাত পা, গলায় মালা এইসব তো থাকতে পারে না। কিন্তু পারো এসে দেখি স্যুভনিরের দোকানে এই জিনিস গুলার থ্রিডি মডেল পাওয়া যাচ্ছে। তখন আমাদের সন্দেহ হতে লাগল, যে কোন ঘাপলা আছে।
সাব্বির ভাই ঠিক করলেন যে দোকানে যেয়ে জিনিসটা দামাদামি করে আসবেন। কিন্তু ভিতরে যেয়ে পরমা সুন্দরী এক সেলস ম্যান দেখে আর পারলেন না। আর যাইহোক, একটা মেয়ের সামনে এই জিনিস হাতে নিয়ে দামাদামি করার কলিজা আমাদের ছিল না। ভুটানের মতো দেশে এসে এই ধরণের জিনিস ওপেন বিক্রি হবে আশা করি নাই। এই জিনিসের উৎপত্তি নিয়ে বিস্তারিত লিখতে চাই না। শুধু বলে রাখি, এইটা ভুটানের অল্প সংখ্যক মানুষের ধর্মীয় সিম্বল টাইপ কিছু। পুনাখার কাছে চিমি লাখাং নামক এক মন্দির থেকে এর উৎপত্তি। কারো যদি আরও জানার ইচ্ছা থাকে ‘Phallus paintings’ লিখে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন। আমি আর ছবি দিলাম না।
সাব্বির ভাই আরও কিছুক্ষণ পর হোটেল চলে গেলেন, আমি থেকে গেলাম। পাহাড়ি নদীর পাড়ে বসে সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম। এতো শান্ত চুপচাপ একটা শহর যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এখানে বসে পার করে দেয়া যায়।
সিম কিনে আনার পর নেট একটিভ করার জন্য কল সেন্টারে কল দিলাম। সাধারণত কল সেন্টারে কল দিলে অমুক করতে এক চাপুন, তমুক করতে দুই চাপুন এইসব করতে হয়। তাই লাউডস্পিকার দিয়ে ডায়ালপ্যাড বের করে রাখলাম। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে একটা মেয়ে ফোন ধরল আর চাইনিজ এক্সেন্টে হেলো বলে উঠল। আমি বেক্কল হয়ে গেলাম কিছুক্ষণের জন্য। নাম্বার টা আবার চেক করলাম যে ভুলে অন্য কোন নাম্বারে কল চলে গেল কিনা।এখানে কল সেন্টারে এতো কম কল আসে যে একজনকে বসায় রাখসে কথা বলার জন্য। আমাদের মতো ওয়েটিং সিস্টেম নাই।
যাই হোক, তাকে বললাম নেট এক্টিভ করতে চাই, সেটিংস পাঠান, সে বলে আমি তো একটু আগেই সেটিংস পাঠায় দিসি। বেক্কল হয়ে গেলাম, তার সাথে আমার কথাই হইতেছে এই প্রথম। আসলে কাহিনী হইসে, কিছুক্ষণ আগেই সাব্বির ভাই তাকে ফোন দিয়ে সেটিংস চাইছে, আমাদের নাম্বার অলমোস্ট সিমিলার হবার কারণে বুঝতে পারে নাই বেচারি।
কয়েকজন দেখলাম বাস্কেটবল খেলছে। পাশে দাঁড়ায় দাঁড়ায় তাদের খেলাম দেখতে লাগলাম। একসময় বল আমার কাছে আসল। স্কুল কলেজে থাকতে প্রচুর খেলতাম, এখন আর খেলা হয় না। তাও বল নিয়ে শুট করে দিলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে স্কোর হয়ে গেল। তা দেখে আমাকে ওরা জিজ্ঞাস করল আমিও খেলতে চাই কিনা। মনে মনে ভাবলাম, ঝড়ে বক পইরা গ্যাসে, এখন খেলতে যাইয়া মান সম্মান ডুবানোর দরকার নাই।
রাতে সাব্বির ভাই কে নিয়ে আবার বের হলাম। শুন শান নীরব শহর। একটা পার্কে দেখেছিলাম বিকেলে ছেলে বুড়া সবাই ব্যায়াম করছিল। পার্কে অনেক ব্যায়াম করা টাইপের জিনিস। সাব্বির ভাই সবগুলো পরখ করে দেখলেন। ভুটানের লোকজনদের আমার অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মনে হয়েছে। খুব লোকই আমাদের মতো (অথবা আমার মতো) ভুঁড়িওয়ালা। রাতে এতো ঠাণ্ডা পড়ে যে আমরা ১ জোড়া হাতমোজা কিনতে বাধ্য হই।
এখানে দেখলাম বেশির ভাগ দোকান চালায় মেয়েরা। এইটা একটা ব্যবসায়িক চালও হতে পারে। কারণ ভুটানে ল্যান্ড করার পর থেকে এমন একটা মেয়েও দেখি নাই, যার উপর আমি ক্রাশ খাই নাই। সৃষ্টিকর্তা যেন সব কিউটনেস দিয়ে এখানকার মেয়েদের তৈরি করেছেন। তার চেয়েও কিউট তাদের কথা বলার স্টাইল। হাতমোজা কিনতে যেয়েও দেখি যথারীতি কিউট পুতুলের মতো একটা মেয়ে। দোকানে ঢুকার আগে প্ল্যান ছিল যে দামাদামি করব। কিন্তু দাম কম বলতেই, মেয়েটা কিউট করে রিকোয়েস্ট করল যে এর কম সম্ভব না, যাতে কম না দেই। আমার মনে হল, আহারে, দিয়েই দেই, কয়টা টাকাই বা যাবে।
রাতে আশে পাশে একটু ঘুরাঘুরি করে হোটেলে ফিরে গেলাম। সাথের ভাই হোটেলের নীচে পিচ ওয়াইনের দাম ১২০ টাকা দেখে সকাল থেকে কাউমাউ শুরু করেছিল যে খাবে, তাকে ঠাণ্ডা করতে ১ টা কিনে দেয়া হল।
টাইগার্স নেস্ট
পরের দিন আমাদের টার্গেট ভুটানের বিখ্যাত টাইগার’স নেস্ট। ভুটান লিখে গুগলে ইমেজ সার্চ দিলে এই যায়গার একটা না একটা ছবি অবশ্যই আসবে। আইফেল টাওয়ার যেমন ফ্রান্সের, স্ট্যাচু অব লিবার্টি যেমন আমেরিকার, তাজমহল যেমন ইন্ডিয়ার প্রতীকের মতো কাজ করে, ভুটানের ক্ষেত্রে টাইগার’স নেস্টকে অনেকটা তেমনই বলা যায়। স্থানীয়রা বলে থাকে ‘তাক্তসাং’। নামের সাথে বাঘ থাকলেও এর আশে পাশে বাঘের চিহ্নও নাই। যায়গাটা আসলে একটা মনেস্ট্রি।
১৬৯২ সালে এই মন্দির প্রথম প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাক্তসাং গুহার পাশে। ‘গুরু পদ্মসম্ভব’ এখানে ৩ বৎসর, ৩ মাস, ৩ সপ্তাহ, ৩ দিন এবং ৩ ঘণ্টা ধরে ধ্যান করেছিলেন। ‘পদ্মসম্ভব’ কে বলা হয় ভুটানের ধর্মীয় গুরু। উনিই প্রথম ভুটানে বুদ্ধিজম প্রচার শুরু করেন। তার স্মরণে মার্চ এপ্রিলের দিকে পারো তে ‘সেচু’ নামে ফেস্টিভাল হয়।
তিব্বতি ভাষায় তাক্তসাং মানে বাঘের গুহা। বলা হয়ে থাকে পদ্মসম্ভব তিব্বত থেকে বাঘের পিঠে করে এখানে আসেন। অনেকে আবার বলে, ‘ইয়েশে সগিয়াল’ নামে এক রাজার বৌ, যে পদ্মসম্ভব এর অনুসারী ছিল, নিজে বাঘিনীতে ট্রান্সফর্ম হয়ে গুরু কে তিব্বত থেকে নিয়ে আসে। এটা নিয়ে আরও অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে, তবে সব কাহিনীতেই বাঘের বিষয়টা কমন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই যায়গাটার নাম হয়ে যায় টাইগার্স নেস্ট। এ বিষয়ে আরও অনেক লেখা নেট ঘাঁটলেই পাওয়া যায়, তাই আমি আর কথা বাড়ালাম না।
আগের দিন রাতে আমাদের ড্রাইভার কে ফোন দিয়ে বলা ছিল, সে টাইম মত সাত সকালে ট্যাক্সি নিয়ে হাজির। পারো থেকে আধা ঘণ্টার মতো রাস্তা ট্যাক্সি তে যেতে হয়, তারপর সেখান থেকে শুরু হয় টাইগার্স নেস্ট যাবার ট্রেকিং। পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে থেকে শুরু হয় পাইনের বন। এতদিন শুধু মুভি তে দেখেছিলাম। প্রথমবার সামনাসামনি দেখে তাই কিছু ফটোসেশন হয়ে গেল, সেই সাথে সকালের নাস্তাটাও সেরে নিলাম।
ট্রেকিং যেখান থেকে শুরু হবে, সেখানে দেখি অলরেডি শ খানেক লোক। সবাই হাতে লাঠি শোঠা নিয়ে ট্রেকিং এর জন্য তৈরি। আমি আমার লাস্ট অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেকিং এর সময় কিনা ট্রেকিং পোল টা বের করলাম। তলপেটে নিম্নচাপ অনুভব করায় পাশে থাকা এক পাবলিক টয়লেটে গেলাম হাল্কা হতে। আমাদের দেশে পাবলিক টয়লেট এর যা অবস্থা দেখি, তাই এখানে খুব ভালো কিছু আশা করি নাই। কিন্তু কিসের কি, যাইয়া দেখি এই পাহাড়ের চিপার মধ্যে আমাদের এয়ারপোর্টের চেয়ে সুন্দর ঝকঝকে বাথরুম।
তো অনেক আনন্দে প্রাকৃতিক কর্ম সারার পর যেই ডান দিকে তাকালাম পানির জন্য, দেখি কিছু নাই। কিছু নাই মানে পানির কোন ব্যবস্থাই নাই। আমার তো আক্কেল গুড়ুম অবস্থা। জীবনে আগে কখনো এই সিচুয়েশন এ পরি নাই। এর পর এখান থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পেয়েছি তা আর না বলি।
ট্রেকিং শুরু হল এবং যথারীতি ৫ মিনিট পর আমার দম শেষ হয়ে গেল। সাব্বির ভাই দিনে ১০০ টা করে বুকডন মারেন, তার কাছে তো এইসব ছেলের হাতের মোয়া। তিনি নাচতে নাচতে উপরে উঠে যান। আমরা উঠতে থাকি, আর একটু পর পর পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে টাইগার্স নেস্ট দেখা যায়, আর আমাদের সেলফি তোলা চলে।
পুরো হিমালয় রিজিওনে দেখা যায় বুদ্ধিস্টরা একটা পাথরের উপর আরেকটা পাথর রেখে একটা স্ট্যাক এর মত বানায়। নেপালে এরকম দেখে নেট ঘেঁটে এর পিছনে অনেক কারণ পাই। অনেকে বলে, এর কোন কাম নাই, হুদাই করে, কনসেন্ট্রেশন বাড়ানোর জন্য, এই লজিকটা আমার পছন্দ হয় নাই। একজন লিখছিল যে, পাথর যেরকম বড়টার উপর ছোট টা রেখে সাজাতে হয়, আমাদের জীবনেও তেমনি বিভিন্ন সময় অনেক কিছুর প্রায়োরিটি বেশি থেকে কম আকারে সাজাতে হয়। সুন্দর ব্যাখ্যা। কিন্তু ট্রেকিং এর সময় এক সিঙ্গাপুরিয়ান গ্রুপের গাইডের কাছ থেকে জানতে পারি যে, বুদ্ধিস্ট রা বিশ্বাস করে এইগুলা তাদের কে পথ হারিয়ে গেলে পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। কোনটা ঠিক কে জানে।
ভুটানে আসার আগে তাক্তসাং নিয়ে যত ভিডিও আছে ইউটিউবে তার সবই বলতে গেলে দেখে ফেলেছিলাম। তখন থেকেই ইচ্ছা অন্য সবার মতো টাইগার্স নেস্ট পিছনে রেখে অন্য সবার মতো ছবি তুলব। ছবি তোলার জন্য ছোট একটা জায়গা আছে, যেখানে ভালো ভিউ পাওয়া যায়। সেখানে দেখি এক ইন্ডিয়ান জামাই বৌ ছবি তুলতে ব্যস্ত। এই যে মহিলা ছবি তোলা শুরু করসে তো করসে, থামাথামি নাই। ডাইনে ,বায়ে, উপর,নীচ কাইত চিত, যত ভাবে ছবিতোলা সম্ভব।
এক পর্যায়ে জামাই বেচারা আমাদের দিকে তাকায় বলল, ‘কিছু মনে করবেন না, ও আসলে একটু বেশি ছবি তুলে, হে হে’। আমরা বললাম , না না ব্যাপার না, তুলতে থাকেন। এদিকে আরও কিছু লোক এসে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে চলে গেছে। শেষে মহিলার একটু দয়া হল, আমাদের জায়গা দিল ছবি তোলার জন্য। আমরা ছবি তোলা শেষ করে সামনে এগুতে এগুতে দেখি ঐ মহিলা আবার ছবি তোলা শুরু করসে। বেচারা জামাইয়ের জন্য আমার খুব মায়া হল।
টাইগার্স নেস্ট জায়গাটার কাছে আসলেই কেমন জানি শান্তি শান্তি অনুভব হতে থাকে। এখানে আসলেই স্পিরিচুয়াল কোন ব্যাপার আছে কিনা কে জানে। পরিবেশ টা অনেক নীরব। অনেকেই আছে, কিন্তু কেও উচুস্বরে কথা বলছে না যাতে মন্দিরের অসম্মান করা হয়। সাব্বির ভাই সেখানে আরেকটা কুকুর পেয়ে তাকে কোলে নিয়ে ঘুরতে থাকলেন।
পরে মন্দিরের ভিতর ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এই মন্দিরের আসল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর অবস্থান। খাড়া ৯০ ডিগ্রী উঠে যাওয়া একটা পাহাড়ের ক্লিফের ঠিক পাশেই তৈরি। এই খাড়া পাহাড়ের আরও অনেকখানি উপর ছোট ছোট কয়েকটা মন্দির দেখলাম। সেখানে কিভাবে যায় বুঝে পেলাম না। মন্দিরের ভিতরে কোন ক্যামেরা বা ইলেক্ট্রনিক্স জিনিস নিয়ে প্রবেশ করা নিষেধ, তাই ভিতরের কোন ছবি তোলা হয় নাই।
ভুটানের বিভিন্ন জায়গায় ( আসলে শুধু ভুটান না, পুরো হিমালয় রিজিওনে ) কিছু গোল সিলিন্ডার টাইপের জিনিস দেখা যায়। এইটাকে তারা বলে প্রেয়ার হুইল । এই সিলিন্ডারের বাহিরে সংস্কৃত ভাষায় ‘ওমানি পাদমে হাম’ নামে এক মন্ত্র লেখা থাকে। তবে অনেক সময় অন্য মন্ত্রও লেখা থাকে। সিলিন্ডারের অক্ষ হিসেবে যেটা থাকে, তাকে তারা বলে ‘লাইফ ট্রি’, যার উপরে আবার আর হাজারটা মন্ত্র লিখে পেঁচানো থাকে। তিব্বতিয়ান বুদ্ধিস্টরা বিশ্বাস করে এই হুইল ঘুরালে, এই মন্ত্র মুখে পাঠ করলে যে সোয়াব পাওয়া যাবে, ঘুরাইলেও একই পরিমাণ সোয়াব পাওয়া যাবে। সত্যি কিনা জানি না, তবে জিনিস গুলা ঘুরাতে মজাই লাগে। তাই টাইগার্স নেস্ট এর ভিতরে যখন এইরকম কয়েকটা দেখলাম, সাথে সাথে এক পুলিশ দৌড়ায় আসলো। ভয় পেয়ে গেলাম, না জানি কি না কি করে ফেলসি। পরে বুঝাইল যে এই গুলা শুধু মাত্র ক্লকওয়াইজ ঘুরানোর নিয়ম। আমার জানা ছিল না, তাই দুই দিকেই ঘুরাচ্ছিলাম। অন্য ধর্মের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধা দেখানো উচিত, তাই সরি বলে চলে আসলাম।
সেখানে আরও কিছুক্ষণ থাকার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু খিদেয় পেট চো চো করছে, তাই না চাইলেও ফেরার পথ ধরতে হল। পথে একটা রেস্টুরেন্ট পরে, সেখানে ৫০০ গুলট্রাম দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে ভেজ বুফে খেলাম। খাবারের মেন্যু দেখে, সাব্বির ভাই আরেকটা বোতল নিয়ে বসে পড়লেন।
পারো ফিরে আমরা থিম্পুর ট্যাক্সি ধরলাম। সকালে যে ড্রাইভার আমাদের টাইগার্স নেস্ট পর্যন্ত নিয়ে এসেছিল, তার ফোন নাম্বার রাখা ছিল আমাদের কাছে। ফোন দিলে সে আমাদের এসে নিয়ে যায়। ফেরার পথে সাব্বির ভাই এর সাথে প্রেম ঘেলে নামে এক লোকের পরিচয় হয়ে যায়। সাব্বির ভাই তার রুপে প্রেম ভাই কে এতই দিওয়ানা করেছিল যে, এই এতদিন পর এখনো এই লোক সাব্বির ভাই কে কল দিয়ে যায়। সে কল ধরেনা দেখে মন খারাপ করে, বলে যে লাগলে সে প্লেনের টিকেট করে দিবে, তাও যাতে ভাই যেয়ে তাকে দেখে আসে। আহারে বেচারা।
পারো থেকে থিম্পু যাবার পুরো রাস্তাতেই অসাধারণ, পাহাড়ের মধ্য দিয়ে একে বেকে চলে গেছে। একটু পর পরই হেয়ারপিন টার্ন, এতো টার্ন নেবার কারনে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেল। আর সারাদিনের হাটা হাটিতে আমি আর সাব্বির ভাই দুইজনই ক্লান্ত। তাই পাহাড়ের ভিউ অ আমাদের ঘুমানো থেকে আটকে রাখতে পারল না। প্রায় সন্ধে নাগাদ আমরা থিম্পু পৌঁছে যাই।
ভুটানের অন্য লেখা গুলো
ভালো লাগলে শেয়ার বাটনে ক্লিক করে শেয়ার করুন
পরবর্তী লেখা গুলোর আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন