Dudhsagar water falls
২০১৭ সালের শুরুর দিকে বন্ধু জ্যোতি বিকাশ দাস এর সাথে যাই গুজরাট, গোয়া আর মুম্বাই ঘুরতে। ট্যুরের প্রথম দিনেই গুজরাটে আমার ডিএসএলার,টাকা পয়সা সব চুরি হয়ে যাওয়ায় সেই ট্যুর পরিণত হয় একটা সার্ভাইভাল স্টোরি তে।  সেই ট্যুরের গোয়া অংশ নিয়ে লিখেছে বন্ধু জ্যোতি বিকাশ দাস।

ডাবলিম স্টেশন থেকে কুলেম

দ্বিতীয় দিনের প্ল্যান খুব এডভেঞ্চারাস। সকাল ৭.১৫ মিনিটে ডাবলিম থেকে কুলেম যাব ট্রেনে। সেখান থেকে এগার কিলোমিটার পায়ে হাঁটা ট্রেক, রেললাইনের পাশ ধরে যাব দুধসাগর ফলস। আমাদের গেস্ট হাউজ থেকে ডাবলিম রেলস্টেশন প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে। এত সকালে পৌছাতে গেলে সকালে বাস-টাস পাওয়া যাবে কিনা জানা নেই। আমরা বাস না পেলে হেঁটে যেতে হবে সে হিসাব করে সকালে রওনা দেয়ার প্ল্যান করলাম। মানুষের এভারেজ হাটার স্পিড ৫ কিমি/ঘন্টা। সে হিসাবে আমাদের ৪ কিলোমিটার হাঁটার জন্য ৪৮ মিনিট লাগবে। অর্থাৎ সকাল ৬.২৭ মিনিটের মধ্যে আমাদের রওনা দিতে হবে।
সেফটি ফ্যাক্টর বিবেচনা করে মোটামোটি ৬.২০ এর দিকে রওনা দিলাম সকালে। বাইরে এখনো অন্ধকার টাইপ, রাস্তায় সব বাতি জ্বলছে। শীত এখনো পুরোপুরি যায়নি। কিন্তু হেঁটে যাচ্ছি তাই শীত লাগছে না। কয়েকটা বাস যাচ্ছে, কিন্তু সেগুলো হয় স্কুল বাস অথবা স্টাফ বাস। শেষে যখন জিনিসটা মেনে নিলাম যে পুরো রাস্তা হেঁটে যেতে হবে, হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম। আপহিলে হাঁটা অনেক কষ্ট। আমাদের পরে আরো ২২ কিলোমিটার হাঁটতে হবে সেই ইচ্ছা আস্তে আস্তে মারা যাচ্ছে। একটা বাসের পিছনে একটা কুকুর দৌড়াচ্ছে। কেন দৌড়াচ্ছে জানি না। একটু দূরে বাসটা থেমে গেল, তখন কুকুরটা কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। আবার আস্তে আস্তে উলটো দিকে আসা শুরু করল। ডার্ক নাইটের ডায়লগ মাথায় আসল। “I’m a dog chasing cars. I wouldn’t know what to do with one if I caught it! I just do things.’’
আমরা কেন হাঁটছিলাম জানতাম। কিন্তু ঠিক কোথায় থামতে হবে জানতাম না। এক আংকেলকে রাস্তায় থামালাম, তার কাছ থেকে ডিরেকশান নিয়ে নিলাম। একটু দূরে একটা হলুদ কালারের দেয়াল দেখা যাচ্ছে, তার পাশ ধরে যেতে হবে, রেললাইন পার হয়েই স্টেশন। গুগল ম্যাপে জায়গাটা ঠিকমত মার্ক করা নেই। একটা পুরনো জং ধরা টিনের ঘর, এই জিনিসের ভেতর কেউ গত কয়েক বছর ধরে মনে হয়না ছিল। এই জিনিস কিভাবে স্টেশন হয়। একটু দোটানায় পড়ে গেলাম। কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়ে নিলাম। ট্রেন নাকি ৭.৩০ এ আসবে। পানি, বিস্কিট কেক কিনে নিলাম, কুলেম পৌছে কোথাও নাস্তা করে নিব। প্রথমে একটা ট্রেন আসল উল্টা দিক থেকে। তারপর আরেকটা আসল যেদিক থেকে আসার কথা সেদিক থেকে। কিন্তু ট্রেন এই ছোট্ট স্টেশনকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেল। ২০ রুপির দুইটা টিকেট করলাম। যে ঘরে গত কয়েক বছর কেউ থাকেনা মনে হচ্ছিল তার ভিতরে একজন লোক এসে বসল আর টিকেট দিল। ট্রেন আসল, তাড়াতাড়ি করে উঠে পড়লাম, লোকাল ট্রেন, হয়ত জায়গা পাব না ভেবেছিলাম। কিন্তু ট্রেন প্রায় ফাঁকা।
Dabolim Station Goa India

একটি চিঠির অপেক্ষা (পড়ুন ইমেইল) টাইপ পোজ।

রেললাইনের এক পাশে সাগর আছে একটা জায়গায়। তাই আমরা ডানপাশে বসলাম। সিট মুখোমুখি, ২০ মিনিট পর পর সিট চেঞ্জ করলাম। সুন্দর সুন্দর জিনিস উল্টা দিকে চলে যাচ্ছে দেখতে কার ভাল লাগে। এখানকার বাড়ি গুলো আলাদা, চারপাশে জংগল টাইপ জায়গা, তার মাঝে এক তলা বাড়ি। অনেক জায়গা, কোন ঘন বসতি নাই। এর মাঝে এক জায়গায় এসে দেখি ডান পাশে সাগর দেখা যাচ্ছে। ট্রেনে বসে সাগর দেখার ব্যাপারটা অসাধারণ। ডানপাশে সাগর ছাড়া কিছু দেখা যায় না, মনে হয় ট্রেন ভেসে ভেসে চলছে। এখানকার ল্যান্ডস্কেপ আলাদা, পাহাড়গুলো ঠিক বড় না, আবার ছোটও না। সাগর পারের জায়গাগুলোতে সাগর তীরের অংশটা থাকে অভিজাত, সবকিছুই সাজানো গোছানো। ঐ জায়গার আসল রুপ দেখতে গেলে ভেতরে যেতে হবে। এখানে মহিলারা মিনিস্কার্ট টাইপ ড্রেস পরে, সে যে বয়সীই হোক না কেন। পুরুষরা সাদা লুঙ্গী পরে, দক্ষিণী ম্যুভিগুলোতে এরকম পোশাক পরতে দেখি লোকজনকে। লোকজনের গায়ের রঙ একটু কালো ধরণের, কিন্তু যতজনের সাথে মিশেছি সবাই সাদামনের।
ট্রেনলাইনের উপর দিয়ে মাঝে মাঝে ওভারব্রিজ বানানো আছে। একটু অন্যরকম, ওভারব্রিজ দিয়ে মানুষ তো পার হতে পারেই, সাথে বাইসাইকেল আর মোটর সাইকেল। গোয়াতে মোটর সাইকেল অনেক বেশী, তার জন্য এই সুবিধা। ট্রেন যাচ্ছে তো যাচ্ছেই, আমি ভাবছি ২০ রুপিতে আর কতদূর নিয়ে যাবে! ডাবলিম থেকে কুলেম প্রায় ৫৪ কিলোমিটার। ২০ টাকায় ৫৪ কিলো, শায়েস্তা খাঁ এখানকার শাসক মনে হয়। ট্রেনে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে নিলাম কিভাবে দুধসাগর যাব। তবে ভাল লাগছিল ট্রেনে বসে থাকতেই। এই পথ যদি না শেষ হয় গানটা ডাউনলোড করার চেষ্টা করছিলাম। ভাল নেটওয়ার্ক নাই।

কুলেম স্টেশন থেকে দুধসাগর ফলস

এর মধ্যে আমাদের ১১ কিলোমিটার ট্রেক করে দুধসাগর ফলস এ যাবার ইচ্ছা মারা গিয়েছে। আমরা অন্য কি উপায়ে যাওয়া যায় সেটা শোনার জন্য যাকে পাই তার সাথেই কথা বলছিলাম। স্টেশান মাস্টার জানালেন ওভারব্রিজ দিয়ে পার হয়ে সামনের রাস্তার ওখান থেকে গাড়ি যায়, আমরা গাড়িতে করে যেতে পারব। সেজায়গায় গিয়ে দেখি দুধসাগর যাবার জন্য বিশাল আয়োজন। রীতিমত অফিস খুলে বসে আছে লোকজন, সাদা চামড়ার লোকজনে ভর্তি। গাড়ি ভাড়া নিতে হবে, একটা গাড়ি ২,৮০০ রুপি। এই অভাবের দিনে ২,৮০০ টাকা কেমনে খরচ করি! তখন কোন একটা গ্রুপে ঢুকা যায় নাকি দেখছিলাম। চারজনের একটা গ্রুপ পেলাম, দুইজন মধ্য বয়স্ক পুরুষ আর মহিলা। এক মহিলাকে I was wondering বলে শুরু করে বিষয়টা বুঝিয়ে বললাম। ওরা চারজন আর আমরা দুইজন, এই ছয়জন মিলে একটা গাড়ি ভাড়া করা যায় নাকি। মহিলা রাজী হলেন। টিকেট করার জন্য লাইনে দাড়ালাম একসাথে। এরা ছিল ব্রিটিশ, আমাদের ভেবেছে ইন্ডিয়ান, যেটা খুবই স্বাভাবিক। লাইনে আমার সামনেই একটা গরু দাঁড়ানো ছিল। গরম লাগছিল, দুধ সাগরে গিয়ে গোসল করতে চায় সম্ভবত। কোন এক বেরসিক এসে গরুটাকে সরিয়ে দেয়।
এর মধ্যে দেখি কে একজন এসে ব্রিটিশ চারজনকে ডেকে নিয়ে চলে গেল, তারা আমাদের কিছু না বলে চলে গেল। আলমকে পিছনে পিছনে যেতে বললাম। একটু পরে আলম এসে জানাল, They ditched us dude! আরো তিনজন সাদা চামড়ার সাথে তারা একটা গাড়ি নিয়ে চলে গেছে। চলে গেছে সমস্যা নাই, বলে যেতে পারত। সাদা চামড়ার হলেই সভ্য হবে, ভদ্র হবে এমন ধারণা করার কোন উপায় নেই। ব্রিটিশের বাচ্চা ব্রিটিশ বলে গালি দিলাম মনে মনে। যদিও স্টেরিওটাইপিং করা ঠিক না, মনের অজান্তেই এটা চলে আসে। এটা একধরণের সান্ত্বনা পাবার স্ট্র্যাটেজি। হুম, পোলা নোয়াখাইল্যা, এইজন্যই আমার জুতা নিয়ে ভাগছে। মেনে নিতে সহজ হয় ব্যাপারটা।
একটু পরে জানতে পারলাম, আমাদের কোন গ্রুপে যেতে হবে না, যে কয়জনই থাকি না কেন ওইখানে লোকজন গ্রুপ বানিয়ে দিবে। যাক বাবা! অনেক গুলা টাকা বেঁচে গেল। আমার সামনে এক লোক দাঁড়ানো যিনি তার ওয়াইফকে নিয়ে এসেছেন। চারিত্রিক দূর্বলতা প্রকাশ করা যাবে না, কিন্তু তার ওয়াইফ অনেক সুন্দরী। অন্তত দুসধসাগরে গোসল করার আগে মেক আপ থাকা পর্যন্ত সুন্দরী ছিল। পরের কাহিনী বলার সুবিধার্থে এই মহিলার নাম দিলাম নেইল পলিশ সুন্দরী। আরেক কম বয়সী মহিলা এসে আমার সাথে গল্প জুড়ে দিল, কেমনে যায়, কই যায়, কি আছে। উনি তার হাজব্যান্ডকে নিয়ে এসেছেন। একটু পরে আমাকে বলল, আপনি যদি কিছু মনে না করেন, আপনার সামনে দাঁড়াই, পিছনে লাইন অনেক লম্বা। বিবাহিত মহিলা, আবার আমাকে চারিত্রিকভাবে সবল প্রমাণ করতে হবে। সোজা মুখের উপর না বলে দিলাম। মহিলা ভগ্ন হৃদয়ে আমার সামনের থাকা নেইল পলিশ সুন্দরীর হাজব্যান্ডের সাথে গল্প জুড়ল। একটু পরে দেখি এই মহিলা আমার সামনের জনের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে গেল। দুর্বল চরিত্রের পুরুষ, একজন মহিলা এসে বলল আর অমনি উনি গলে গেলেন। ওই মহিলার জায়গায় অন্য কোন পুরুষ হলে বলত মামা বাড়ির আবদার পাইছেন? মামা বাড়ি কা আবদার হেয় কিয়া!! এই মহিলার নাম দিলাম খচখচ মহিলা। খচখচ মহিলা, নেইল পলিশ সুন্দরী, তাদের হাজব্যান্ড, আমি আর আলম, ছয়জন একটা গাড়িতে রওনা হলাম। সবার সাথে একটা করে লাইফ জ্যাকেট।
Kulem to Dudhsagar falls

জংগলের মাঝে মাঝে এমনভাবে রাস্তা গায়েব হয়ে যায়। ভগবানের নাম নিয়ে ড্রাইভার পানিতে নামিয়ে দেয় গাড়ি।

গাড়ি জংগলের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে, কাঁচা রাস্তা। দুনিয়ার সকল ধুলা এসে গাড়ির ভেতর ঢুকছে। এর মাঝে খচখচ মহিলা গাড়ির ড্রাউভারকে বিরক্ত করছে। ওইখানে কে থাকে, জংগলের ভেতর খাবার কিভাবে পায়, কোন জংলী আছে কিনা, এরা জংগল থেকে বের হয় কিভাবে, মন্দিরে কার পূজা করে, কারা করে, কেন করে। মহিলার খচখচানিতে ড্রাইভারও বিরক্ত হয়ে উত্তর দিচ্ছিল। শেষে আর কেউ কথা বলে না, মহিলা আর তার হাজব্যান্ড কোন লোকাল হিন্দি একসেন্টে খচখচ করেই যাচ্ছিল।
দুধসাগর থেকে একটু দূরে পার্কিং এর জায়গা। গাড়ির নাম্বার মুখস্ত করে লাইফ জ্যাকেট হাতে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। কিছু লোকজন খালি গায়ে ফেরত আসছে। জংগলের মধ্য বড় বড় পাথর। কিছু জায়গায় ঝিরঝির করে পানি নেমে আসছে। ছোট ছোট পায়ে হাঁটা ব্রিজ পার হচ্ছি আর ছবি তুলছি। পাশে দিয়ে বিকিনি পড়া মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, জীবনে এরকম কিছু সামনাসামনি দেখি নাই। একটু ইতস্তত ছিলাম। কিন্তু একটু পরে ব্যাপারটা স্বাভাবিক মনে হতে শুরু করল। মেয়েরা বিকিনি পরবে আর ছেলেরা আন্ডি পরে ঘুরে বেড়াবে, এটাই স্বাভাবিক, নতুন তো কিছু নয়।
On our way to Dudhsagar falls দুধসাগর ফলস এর পথে

ছোট একটা ট্রেকের, অল্প একটু অংশ।

জংগলের মাঝখানে টয়লেট আর ড্রেস চেঞ্জ করার জায়গা। ইন্ডিয়ানরা এদের পর্যটনকে অনেক সিরিয়াসলি নিয়েছে আর সেখান থেকে ইনকাম করছে। চেন্নাই এক্সপ্রেস ম্যুভিতে দুধসাগর ফলস দেখিয়েছে। এত উচু থেকে এত পরিমাণ পানি নেমে এসে যে এটাকে আসলেই দুধসাগর মনে হয়। কিন্তু সেই দুধ সাগর বর্ষাকালের দুধসাগর। আর আমরা যখন গিয়েছি সেটা শীতের শেষে মরা পানিসাগর। জংগলের মধ্য দিয়ে ঝর্ণার একেবারে নিচের অংশে যাওয়া যায়। আর ট্রেন লাইন আরেকটু উপরে, ঝর্ণার মাঝামাঝি। ট্রেক করে আসলে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ব্যাক করব মালবাহী ট্রেনে চড়ে। ট্রেন অনেক আস্তে চলে এই জায়গায়, সহজেই উঠে পরা যেত। হিচিকিং ওয়ার্ডটা শিখেছি মাত্র তখন। কিন্তু নিচে থেকে মনে হল ট্রেক না করেই বরং ভাল হয়েছে।

দুধসাগর ফলস

Dudhsagar falls Goa India

She was not at her peak, but she will be back soon.

দুধসাগর এর মধ্যে বাংলাদেশের মাধবকুন্ড হয়ে গেছে। লোকের পিঠে লোক, এর মাঝেই কয়েকজন জামা-কাপড় খুলে পানিতে নেমে গেছে। সবারই লাইফ জ্যাকেট পরা অবশ্য। আমি ভেবেছিলাম লাইফ জ্যাকেটটা হুদাই একটা ব্যবসার ধান্দা মাত্র। কিন্তু ইহা বরই কাজের জিনিস ছিল। পানি এত পরিষ্কার যে না নেমে উপায় ছিল না। প্রিপারেশান ছিল না, যাই পরে ছিলাম কোনমতে নেমে গেলাম। আলম লুঙ্গী, ট্র্যাকিং বুট, গামছা ইত্যাদি যা যা লাগবে সবই নিয়ে এসেছিল। পানি কমফোর্টেবলের চেয়ে সামান্য একটু ঠান্ডা। লাইফ জ্যাকেট পরে ভেসে আছি, কোন এফোর্ট দেয়ার দরকার নাই। জীবন সুন্দর, লাইফ ইজ বিউটিফুল।
Dudhsagar waterfalls GOa india

পাহাড়ের গায়ে পানি বেয়ে আসার চিহ্ন। বর্ষাকালে একবার ট্রেনে করে জায়গাটায় যেতে চাই, আসল দুধসাগর দেখার জন্য।

পাহাড়ের গা বেয়ে পানি নেমে আসছে, স্রোতের বিপরীতে পাহাড়ের গায়ে পৌছাতে চাই। আগোরাতে ঝর্ণার পানি ২৫০ টাকায় ২৫০ মিলি বিক্রি করে। আমি কাছে গিয়ে একটাকা প্রতি মিলি দরের পানি খাওয়ার চেষ্টা করি। দামী পানি, টেস্ট ভাল বলে স্বান্ত্বনা পাই। ঐদিকে পাহাড়ের গায়ে কিছু বানর ঘোরাফেরা করছে। কই জানি পরেছি, ইন্ডিয়াতে বানরগুলা লোকজনের কাপড়-চোপড় নিয়ে দৌড় দেয়। এই বানরগুলাও এত গুলার লোকের মাঝে কিছু একটা মাটি থেকে কুঁড়িয়ে দৌড় দিচ্ছে। বেশী নিরাপদ থাকবে ভেবে আমার কাপড়-চোপড় একটু দূরে রেখেছিলাম। বানরগুলা কাছে আসার চেষ্টা করছে, কয়েকজন এদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। ততক্ষণে আমি ভালই ঠান্ডা অনুভব করছি, তাছাড়া বানর কাপড় নিয়ে গেলে কি পরে হোটেলে ফিরব, শরমের বিষয়!
আমি দ্রুত সাঁতার কেটে পানি থেকে উঠে যাবার চেষ্টা করি। ঐদিকে এক বান্দর আমার কাপড়-চোপড়ের কাছে চলে এসেছে। ঐ জায়গার সবচেয়ে কাছে একটা মেয়ে ছিল। আরে বেহেনজি, বানরটাকে আটকাও বলতে চাচ্ছিলাম। Stop that monkey, ওস বান্দরকো রোকো নাকি বান্দরটা আটকাও বলেছিলাম ভুলে গেছি। যাই হোক, আমার বানর আমার কাপড়ের পাশে পৌছে গিয়েছিল এবং কিছু একটা নিয়ে দৌড় দিয়েছে। কাছে গিয়ে দেখলাম আমার জিনিস সবই ঠিক আছে। আসলে এরা লোকজনের ফেলে দেয়া লজেন্স, চুইংগামের খোসা নিয়ে দৌড় দিচ্ছে। মিষ্টি জিনিস খেয়ে মজা পেয়েছে মনে হয়।
আসার সময়তো মজা করে ট্রেনে চলে এসেছি, ফিরব কিভাবে জানি না। কুলেম এসে প্রথম কাজ ছিল খাওয়া-দাওয়া করা। আলম আমাদের গাড়ীর ড্রাইভারকে বলল যে তার চেহারা ভিরাট কোহলির মত। ড্রাইভার খুশীতে গদগদ। আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসেছি। কোন একটা থালি অর্ডার করি। সামনের টেবিলে এক রাশিয়ান মেয়ে বসা। এমন না যে আমি এত বেশী রাশিয়ান লোকজন চিনি যে দেখেই বলে দিতে পারব এ রাশিয়ান। রাশিয়ান ভাষাও বুঝি না। আমার সিক্সথ সেন্স বলেছে ঐ মেয়ে রাশিয়ান, সুতরাং সে রাশিয়ান। রাশান বলা উচিত, বলব না, আমার ইচ্ছা। ফর্সা গোলগাল চেহারার রাশিয়ান মেয়ে সিগেরেট ধরিয়েছে। সুন্দরী মেয়ে, ঠোঁটে বিড়ি, ডেডলি কম্বিনেশান। ভাবছি দুই একবার সিগেরেট ট্রাই করা উচিত।
ফেরার পথ বিভিন্ন লোকের কাছে জিজ্ঞেস করে নিই। সবচেয়ে বেশী কমন যে রুটটা এসেছে সেটাই ফলো করব সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কুলেম থেকে বাসে পন্ডা, সেখান থেকে আবার বাসে ভাস্কো, সেখান থেকে আবার বাসে আমাদের হোটেল। সরাসরি কোন বাস নাই, তবে আমি একবারো এতবার বাস ফিরে আসার জার্নিতে বিরক্ত হইনি। লোকাল বাস, কিন্তু এরা টাকা দেয়া মাত্র টিকেট ধরিয়ে দেয়। মামা কালকে ১০ টাকা দিছি আজকে ১৫ টাকা চাও ক্যা, বলার উপায় নাই। আমাদের ভাড়া এসেছিল সামথিং পঞ্চাশ পয়সা, মামা অনেকগুলা পয়সা ধরিয়ে দেয় ভাড়া রেখে। সব কয়টা পয়সা আমার কাছে রয়ে গেছে। একদিন আমি কয়েন কালেক্ট করি বলে ভাব নিব।
ভাস্কো পৌছে আমাদের কাজ ছিল বাইক খুঁজে বের করা। কাউকে পাই না, একজন বলল বাইক দিবে কিন্তু আমাদের পাসপোর্ট রেখে দিবে। বাইক নিব না, তবুও পাসপোর্ট দিব না বলে পণ করে চলে আসলাম বগমালো। হোটেলে এসেই ঘুম, গোয়ায় যে কয়দিন ছিলাম, ভালমত সূর্যাস্ত দেখতে পারলাম না।

রাতে ভিন্সির রেস্টুরেন্টে খেয়ে দেয়ে সাগরপারে গিয়ে আবার উদাস হবার চেষ্টা করি। কিছুক্ষণ উদাস হবার চেষ্টা বাদ দিয়ে শাহরুখ খান হবার চেষ্টা করি। একটা চড়ুই পাখি ঢেউয়ের সাথে কাবাডি খেলছে। এটা চড়ুই পাখি কিনা, জানি না, আমার সিক্সথ সেন্স যা বলে তাই ঠিক। বালুর উপর বসে আছে, যখনি ঢেউ আসে লাফ দিয়ে পিছিয়ে যায়। বাহ মজা তো! আমিও চেষ্টা করি ঢেউয়ের সাথে কাবাডি খেলার। ঢেউয়ের সাথে কাবাডি খেলাও অত সহজ না, বিশেষ করে পাথর আছে যেখানে। একটা আনপ্রেডিক্টিবল ঢেউ এসে আমার শার্ট-প্যান্ট ভিজিয়ে দেয়। পাশের বড়লোক হোটেলটার ভেতর পার্টি হচ্ছে। “আভি তো পার্টি শুরু হুই হে” বাজছে। আমরা বাইরে থেকে হাত-পা দুলাই। You don’t know when your inside child awakes. Sometimes, you awake your inside child.

লেখা ভালো লাগলে নিচে শেয়ার বাটনে ক্লিক করে শেয়ার করুন
পরবর্তী লেখা গুলোর আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।