ভস থেকে রওনা দিয়ে দিলাম আজকের শেষ গন্তব্য গুদ্ভাঙ্গেন এর উদ্দেশ্যে। বের্গেন থেকেই, রাস্তার পাশে দেখা যাবে অগুনিত লেক। এগুলাকে বলে ‘ফিউর্ড’। এরা কিভাবে তৈরি হল, সেটা নিয়ে পরের পোস্ট এ বলব। প্রত্যেক্টার পাশেই দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন সময় কাটাতে মন চায়। গাড়ি ভাড়া করে আসলে হয়তো সেটা করা যেত। বাস এ সেটা সম্ভব না। রাস্তা দেখে মনে হলো, দ্রুতই ইউরোপিয়ান ড্রাইভিং লাইসেন্স টা নিয়ে নিতে হবে।

রাস্তার পাশেই পাহাড় , তার গা বেয়ে একটু পর পর অসংখ্য ছোট ছোট ঝরনা। আস্তে আস্তে মনে হল হাইট গেইন করছি। বাস উপড়ের দিকে উঠছে। কিন্তু রাস্তার ঢাল এতো টা বেশি না, তাই চট করে বুঝার উপায় নাই। বাস একটা টানেল এ ঢুকল। বের হওয়ার পর মনে হল আরেক দেশে চলে আসছি। হুট করে আসে পাশে সব ধব ধবা সাদা বরফ। রাস্তার পাশে ছোট পাহাড়ি নদী টা তেও বরফের পরিমাণ বেড়ে গেল। মাঝে পড়ল আরেকটা লেক এর মত, যার উপরিভাগ পুরোটা জমে বরফ হয়ে আছে।

যাত্রার শুরতে বাস ড্রাইভার বলে দিসে, যার যেখানে নামতে হবে, তার আগে বাসে স্টপ বাটন আছে, সেটা প্রেস করতে। সব সিট এর সাথেই এই বাটন আছে। এটা প্রেস করলে সে নেক্সট স্টপ এ নামায় দিবে। তাছাড়া সে দাঁড়াবে না। এধরনের বাসে নরমালই একটা ডিসপ্লে থাকে যেখানে দেখায় যে পরবর্তী স্টপ কোনটা। কিন্তু এই বাস এ ডিসপ্লে নষ্ট। তাই এখন কোথায় আছি বোঝার কোন উপায় নাই। কিন্তু নরওয়ে এর সময় জ্ঞান এর উপর ভরসা ইতোমধ্যে অনেক বেড়ে গেছে। তাই যতটার সময় আমার পৌছার কথা, সেই সময়ের একটু আগে ভরসা করে স্টপ চেপে দিলাম। আর যথারীতি বাস ঠিক স্টপ এই নামায় দিল।

প্রায় ৪৫ মিনিট পরে পৌছে যাই, আমাদের আজকের গন্তব্য গুদভাঙ্গেন এ। হাইওয়ের পাশে পিচ্চি কিউট দেখতে একটা বাস স্টপ এ আমাদের নামিয়ে দিল। এখান থেকে হেটে ৪০০ মিটার যেতে হবে, হোটেল এ। এই বাস স্টপ টাকে আমার দেখা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সুন্দর বলে ইজিলি চালিয়ে দেয়া যাবে। আমাদের সাথে জাপানিজ একজন ও নামল। সাথে বাচ্চা নিয়ে এসেছি দেখে জিজ্ঞেস করল, বয়স কত। ১৪ মাস শুনে খুব অবাক হলো। বলল, তারও দেড় বছরের মেয়ে আছে, কিন্তু তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার সাহস করে না। তাই সে একাই এসেছে। আমি তখন বললাম, আমার ছেয়ে ২ মাস বয়সেই আমার সাথে ঘুরতেসে, অস্ট্রিয়া তে ট্রেকিং ও করে আসছি ওকে নিয়ে :p। শুনে খুব অবাক হলো। সে বিদায় নিয়ে এগিয়ে গেল, আমরাও দুয়েকটা ছিবি তুলে হাটা দিলাম।

এটা আসলে একটা ফেরি ঘাট। ছোট একটা গ্রাম এর মতো। বড়জোর ১৫ ২০ টা বাড়ি আছে। এর মধ্যে সবি হোটেল মনে হল। অফ সিজন হোওয়াতে মনে হল সব ই ফাকা। আমার হোটেল টা বাস স্টপ এর একটু পাশে হলেও, রুম এর চাবি নিয়ে আসতে হবে ফেরি ঘাট থেকে। ঘাট এর একটু পাশেই একটা সুন্দর কাঠের কেবিন টাইপ এর একটা ঘর, পুরো ভাইকিং স্টাইল এ বানানো। দেখে আফসোস লাগল, এরকম একটা কেবিন এ থাকতে পারলে সেই হতো। কিন্তু উপায় নাই। এমনিতেই এখানে হোটেল এর খরচ অনেক বেশি। যাইহোক, রিসেপশন এ যাওয়ার পর চাবি দিল, আর একতা ম্যাপ বের করে আমাকে দেখাচ্ছে যে আমার রুম কোনটা। দেখি একটু আগে দেখা ভাইকিং কেবিন দেখাচ্ছে। বিশ্বাস হল না শুরুতে, তাই আরেকবার জিজ্ঞেস করে কনফার্ম করে নিলাম। আসলে লো সিজন এ লোকজন কম থাকাতে আমাদের কাছের রুম টাই দিয়ে দিসে। ওইদিন পুরো এলাকায় মনে হয় আমরা সহ বড়জোর আর ২ ১ টা ট্যুরিস্ট ছিল।

রুম এ ব্যাগ ট্যাগ রেখে বের হয়ে গেলাম। রুমের পাশেই একটা পাহাড়ি নদী, নাম “নেরোডালসেলভি(Næreøydalselvi)’। তার উপর ভাইকিং স্টাইল এ বানানো ব্রিজ। লোকজন একে বলে ভাইকিং ব্রিজ। তার উপারে আছে ভাইকিং ভিলেজ। একটা বড় অংশ জুড়ে, বেড়া দিয়ে ঢাকা একটা গ্রাম। আগের ভাইকিং দের আদলে বানানো। টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকতে হয়। সেখানে আগের আমলের ভাইকিং দের লাইফশটাইল সম্পর্কে একটা আইডিয়া পাওয়া যায়। যদিও যারা সেখানে থাকে, তারা আসলে সহীহ ভাইকিং না, সবাই অভিনেতা 😛 । সিজন টাইমে এইটা একটা বড় টুরিস্ট এট্রাকশন। এখন অবশ্য তেমন একতা ভিড় নাই।

এর পাশেই শুরু ‘ন্যারোফিউর্ড’। চারিদিকে খাড়া পাহাড়ে ঘেরা পাহাড়ি লেক এর মতো। পানি কাচ এর মতো পরিষ্কার। লেক এর তলায় পড়ে থাকা পাথর সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সাথে ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছে সেই পাথরে লেগে থাকা স্টার ফিস গুলো। আর অসংখ্য ছোট ছোট জেলিফিশ। নেট ঘেঁটে জানলাম এই ফিউর্ড এর পানি বেশির ভাগ ই লবণাক্ত। এটা আগে জানা ছিল না। নদীর মতো পানি সাগরে যেয়ে পড়লেও, এর পানি কেন লবনাক্ত, তার একটা ইন্তেরেস্টিং ব্যাখা আছে । তবে সেটা এখানে বর্ণনা করে পোস্ট আর বড় করব না।

লেক এর পাড়ে কারপেটের মতো সবুজ ঘাস। সেখানে পিকনিক করার জন্য আবার কাঠের টেবিল এর মতো বানানো আছে। বসে আসে পাশের ভিউ দেখতে থাকলাম। পাশেই আবার আছে বাচ্চাদের খেলার জন্য শিশু পার্ক। সেখানে ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে বিকাল টা পার করে দিলাম।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।