টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট বান্দিপুর

বান্দিপুর টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট। নাম শুনেই বোঝা যায় যে এখানে বাঘ মামা রা ইচ্ছা মতো ঘুরে বেড়ায়। সাউথ ইন্ডিয়া রাইডের ৭ম দিনে ওটি থেকে মাইসোর যাব। যাওয়ার পথে এই ফরেস্টের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। আর রাস্তায় যাবার সময় যদি আপনার আশে পাশে হরিণ, বানর, হনুমান, ময়ূর, হাতি ইত্যাদি আমাদের দেশের গরু ছাগলে মতো ঘুরে বেড়ায়, তাহলে কেমন লাগবে?

এখানে বাঘ ছাড়া ভাল্লুক ও শুনলাম আছে। তাও বাঘ এর ব্যাপারটার জন্যে একটু ভয়ে ছিলাম। ট্যাক্সি তে গেলে এক কথা ছিল, বাইক তো পুরা খোলা। তাই সার্চ মারলাম যে কেও এই রাস্তায় বাইক নিয়ে যাওয়া আসা করে কিনা।

জঙ্গলের মধ্য দিয়ে, কোলাহল মুক্ত সুন্দর রাস্তা – বান্দিপুর
জঙ্গলের মধ্য দিয়ে, কোলাহল মুক্ত সুন্দর রাস্তা – বান্দিপুর

কয়েকটা ব্লগ পেলাম বাইক রাইডের। এক গ্রুপ তো আরেক কাঠি সরেস, তারা বাইসাইকেলে করে এই জংল পার হয়েছে। যাওয়ার আগে নাকি তারা নিজেদের এই বলে সাহস দিয়েছে যে, বাঘ শব্দ ওয়ালা জায়গার আসে পাশে আসে না। আর মানুষ হয়তো বাঘের পছন্দের খাবার না। তারা যেহেতু বেচে‍ ফিরে আসছে, আমি ভাবলাম যে একটা ট্রাই নিয়ে নেই।

জংলের এরিয়ার ভিতর ঢুক্তে না ঢুকতেই দেখি সুন্দর একটা চিত্রা হরিণ, হেলতে দুলতে রাস্তা পার হচ্ছে। আর ৪০ ৫০ টা হরিণের দল রাস্তার দুই হাত দূরে বসে আছে। এতো কাছ থেকে হরিণ সুন্দরবন যেয়েও দেখতে পাই নাই। বাইক থামিয়ে যে ছবি তুলব সেই উপায় নাই, নামা নিষেধ। আর নিষেধ না থাকলেও, বাঘের ভয়ে এম্নিতেও দাড়াইতাম না। হরিণ যেতে না যেতেই দেখি পাশে ২ টা হাতি চিল করে কি জানি খাইতেসে। রাইডে যাবার আগে, ইউটিউবে দেখে ছিলাম যে পাগলা হাতি কিভাবে মাঝে মইধ্যে বাইকারদের দৌড়ানি দেয় এখানে। তাই রিস্ক না নিয়ে তাড়াতাড়ি পার হয়ে গেলাম।

রাস্তার পাশে এভাবেই হরিণ ঘুরাঘুরি করে
রাস্তার পাশে এভাবেই হরিণ ঘুরাঘুরি করে

জংলের মধ্যে রাস্তা টা অদ্ভুত সুন্দর‍, কিন্তু যাতে কেউ ওভারস্পিডিং করতে না পারে, একটু পর পর স্পিড ব্রেকার দেয়া। প্রতিটা স্পিড ব্রেকার আসলেই আমি আল্লাহ করতে থাকি, যাতে বাঘ না বাইর হয়। আর গালিগালি করতে থাকি যারা এই ব্রেকার গুলা বসাইছে। যদিও তাদের ইন্টেনশন ভালো, বেশি স্পিডিং করলে রাস্তা বানর হরিণ ইত্যাদি এক্সিডেন্ট করতে পারে। কিন্তু আমার এতো কিছু ভাবার সময় কই?

বাঘ এর ভয় মনে হয় যথেষ্ঠ ছিল না, একটু পর দেখি লেখা, সামনে ভালুক আসতে পারে। সাবধানে থাকতে, আর যদি ভাল্লুক এর সাথে বাচ্চা থাকে, তাহলে দূরত্ব বজায় রাখতে। আমি তখন মনে মনে ভাবতেসি, অনেক হইসে ভাই জংল দেখা, তাড়াতাড়ি এইখান থেকে বাইর করেন আমারে। এদিকে সন্ধাও হয়ে আস্তেসে। যদি এখানে বাইক নষ্ট হয় কোন কারনে, তাহলে আর দেখতে হবে না।

জঙ্গল শেষ, স্বাগতম কর্নাটক 🙂

একটু পর দেখলাম এক হাতি রাস্তা পার হবে হবে করতেসে, দেখে দাঁড়ায় গেলাম। ইউটিবে দেখা ভিডিওর কথা মনে পড়তেসিল। এক বেটা এনফিল্ড নিয়া হাতির কাছে গেসিল। হাতি লাত্থায়া বাইকের বারোটা বাজায় দিসিল। আমাকে দেখে লোকাল একজন বলল পার হয়ে যাইতে, এই বেটা নাকি কিছু করবে না।

হাতি কে দেখে ভয়ে দাঁড়ায় ছিলাম

ভাগ্যক্রমে ভাল্লুক,বাঘ,বাইসনের কেও দেখা দেয় নাই।আমিও সহীহ সালামতে সেখান থেকে বের হয়ে আসি। এই জংলের মধ্যেই আবার তামিলনাড়ুর বর্ডার ক্রস করে ঢুকে পড়ি কর্নাটক প্রদেশে। ভয়ে ভয়ে থাকলেও, এইটা ছিল আমার রাইডিং এর অন্য রকম অভিজ্ঞতা। সেখান থেকে বের হয়ে আবার শহরে ঢুকে বাস ট্রাকের পে পু তে মনে হচ্ছিল যে জংল ই ভালো ছিল।

যারা মনে করতেছেন, আরে ধূর। কিসের বাঘ আসবে। কত সুন্দরবন গেলাম, বাঘের পায়ের ছাপ ও দেখলাম না, তাদের জন্য এই ভিডিও টা। রওনা দেয়ার আগের দিন রাতে, বসে এই ভিডিও দেখতেছিলা, আর ভাবতেছিলাম যে যাওয়া ঠিক হবে কিনা 🙂 এই ফুটেজ টা, নাগরহোল ন্যাশনাল পার্কের, আমি যেটাতে গেলাম, তার ঠিক পাশেই।

আমার আরো রোড ট্রিপ বিষয়ক লেখা পড়তে পারেন এখানে যেয়ে
আমার রোড ট্রিপ ব্লগ

লেখা ভালো লাগলে নিচে শেয়ার বাটনে ক্লিক করে শেয়ার করুন   পরবর্তী লেখা গুলোর আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।