ঝিনু ডাণ্ডা Jhinu Nepal

পোখারা

কিউমি ও সিউই

আজ আমাদের হিমালয়ে শেষ দিন, ৩ ঘণ্টা হেঁটে আমাদের যেতে হবে কিউমি, সেখান থেকে আরও ২ ঘণ্টা দূরে সিউই। সিউই থেকে জীপ আর লোকাল বাস দুইটাই পাওয়া যায় পোখারা যাওয়ার জন্য। জীপের ভারা অত্যধিক বেশি, কিন্তু লোকাল বাসের কোনও টাইমটেবিল নাই। আমাদের হাঁতে টাকা শেষ হতে চলায় ঠিক করলাম বাস যতক্ষণ ইচ্ছা পরে আসুক, কিন্তু বাসেই যাব।
শেষের দিনের ট্রেকটা ছিল অনেক পেইনফুল। এতদিন আমার একটা টার্গেট ছিল যে যেভাবেই হোক অন্নপূর্ণা যেতে হবে, তাই শরীরের উপর প্রেশার দিয়ে টেনে নিয়ে গেছি নিজেকে। এখন তো আর কোন টার্গেট নাই। গত ৭ দিনের টানা ট্রেকিং এ শরীর এমনিতেই কাহিল। তাই আর হাটতেই ইচ্ছা করছিল না, মনে হচ্ছিল কখন সিউই পৌছব।
সিউই নেপাল

বিদায় হিমালয়

৬ঘন্টা পর সিউই পৌঁছলাম, বাস আসল তারও প্রায় ২ ঘণ্টা পর, এই সময় এক হোটেলে বসে লাঞ্চ করে নিলাম, আর শেষবারের মতো মন ভরে দেখে নিলাম হিমালয়কে। রাতে পোখারা যেয়ে ডিনার করে হোটেলে যেয়ে দিলাম ঘুম।

পোখারা

৯ম দিনের প্ল্যান ছিল পিস প্যাগোডা ঘুরতে যাওয়া। আর তেমন কোনও কাজ নাই। ৭ দিন ট্রেকিং এর পর ২ দিন রেখেছিলাম পোখারা তে চিল করার জন্য। পিস প্যাগোডার জন্য ৮০০ রুপিতে ট্যাক্সি ঠিক করে উঠে বসলাম। পিস প্যাগোডা থেকে পুরও পোখারা শহরের এক প্যনারোমিক ভিউ পাওয়া যায়। যায়গাটাও অনেক নীরব। আধা ঘণ্টার পর ঘুরা ঘুরি করে আবার ফিরে এলাম।
peace pagoda pokhara nepal পিস প্যাগোডা পোখারা নেপাল

পিস প্যাগোডার সামনে

এদিকে আবার জার্মান মেয়ে দুইটা ডিনারের জন্য ইনভাইট করল। তাই রাতে গেলাম OR2K তে ডিনারের জন্য। তাদের সাথে ছিল লেবানিজ ইব্রাহীম। তার অনুরোধে সেদিন মিডল ইস্টের খাবার ট্রাই করলাম। নো অফেস্ন টু হিম কিন্তু আমার জীবনে এতো বিস্বাদ খাবার কখনো খাই নাই। আমাদের দেশি খাবারের উপর আসলে কিছু নাই 😛
১০ম দিন আমার প্ল্যান ছিল প্যারাগ্লাইডিং করা। হাঁতে টাকাও শেষের দিকে, তা নাহলে বাঞ্জি জাম্প দেয়ারও ইচ্ছা ছিল। সকাল থেকেই হাল্কা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল, এরকম চলতে থাকলে প্যারাগ্লাইডিং প্ল্যান মাঠে মারা যাবে। মন খারাপ হয়ে ছিল, তাই চলে গেলাম ফেওয়া লেকের পাশে নোমানের সাথে, ঐখানে বসে থাকতে থাকতে দেখলাম বৃষ্টি শেষ হয়ে রোদ উঠছে, আমাকে ফোন দিয়ে জানালো যে আবহাওয়া ভালো, প্যারাগ্লাইডিং আজকেই হবে। শুনে তো খুশি হলাম, কিন্তু ভয় ভয়ও লাগতে লাগলো। নোমানের হাঁতে টাকা শেষ দেখে সে বলল যে ও করবে না। অগত্যা একাই বের হয়ে গেলাম।
peace pagoda pokhara nepal পিস প্যাগোডা পোখারা নেপাল

পিছনে পুরো পোখারা শহর

আমি আর এক অস্ট্রেলিয়ান ও আমাদের দুই জনের পাইলট এক পিচ্চি মারুতি কার এ চেপে বসলাম, এটা আমাদের ফেওয়া লেকের পাশে এক পাহাড়ের উপরে নিয়ে যাবে, যেখান থেকে প্যারাগ্লাডিং শুরু হবে। যেতে যেতে কথা উঠল কার দেশের সর্বোচ্চ পাহাড়ের উচ্চতা কত। অস্ট্রেলিয়ান বলল ২২২০মিঃ, আমি বললাম ১০৬৪মিঃ (সাকা হাফং – আনঅফিসিয়াল)। সাথে এক পাইলট ছিল (কোন দেশের ভুলে গেছি), সে বলল ‘ দা হাইয়েস্ট উই হেভ ইজ ফাইভ থাউজেন্ড ফাইভ হান্ড্রেড’। আমরা অবাক হওয়ার আগেই সে তার কথা কমপ্লিট করল – ‘ফাইভ থাউজেন্ড ফাইভ হান্ড্রেড সেন্টি মিটার’ । আমরা হো হো করে হেসে উঠলাম।
আমার পাইলট ছিল অস্ট্রিয়ান, ইউহেন কিক। সে আমাকে হারনেস পড়িয়ে দিল। তারপর পাহাড়ের পাশে একটা ছোট স্ট্রিপ এ দ্বারা করায় দিয়ে বলল, যখন সে বলবে তখন যাতে দৌড় দেই। শুনে গলা শুকায় গেল। ভাবলাম ব্যাটা বলে কি !! দৌড় দিয়ে বলে পাহাড় থেকে লাফ দিতে হবে। তার উপর বিশ্বাস এনে বলামাত্র দিলাম দৌড়। একটু দৌড় দেয়ার পর যখন মনে হল যে পাহাড় থেকে পড়ে যাচ্ছি, ফ্রি ফল হচ্ছে, ঠিক তখনই এক ঝটকায় উপরে উঠে আমরা উড়া শুরু করলাম। এর অনুভূতি আসলে না উঠলে বোঝা যাবেন। ছবি তুললাম কিছু উপরে।
paragliding pokhara nepal প্যারাগ্লাইডিং পোখারা নেপাল

প্যারাগ্লাইডিং পোখারা নেপাল

প্রায় ১৫ মিনিট উড়ার পর ল্যান্ডিং এর সময় পাইলট বলল পায়ে মাটি লাগা মাত্র যাতে দৌড় দেই। আমি বললাম ওকে। কিন্তু আমার তো আর মাথায় নাই যে ডান পায়ের হাঁটুর অবস্থা বারোটা। তাই যেই মাত্র দৌড় দিতে গেলাম, হাঁটু ভাজ হয়ে পড়লাম আছাড় খেয়ে,পাইলট আমার উপরে। হাত পা ছুলে গেল, ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল। পাইলট বলল খারাপ ক্ষেত্রে পা ভাংতে পারত।
বিকালে ২ তা সাইকেল ভাড়া করে দুজন বের হয়ে পড়লাম শহরটা ঘুরে দেখতে। পাহাড়ি এলাকায় সাইকেল চালানোর পেইন হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।রাতে আমরা গেলাম ডেভিড আর তার আব্বা আম্মার সাথে ডিনার করতে (সেই ৬৩ বৎসরের বুড়া বুড়ি )। এর মাঝে আবার প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। তাদের সাথে প্রায় দুই ঘণ্টা গল্প করে আমি আর নোমান বের হয়ে গেলাম হোটেল যাবার জন্য। হোটেল প্রায় ১ কিমি: দূরে, তাই ভাবলাম হেটেই যাই। কিন্তু বের হয়ে তো আক্কেল গুড়ুম, হাঁটব কি, রাস্তাই তো নাই। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটু পানি। ঢাকায় বৃষ্টিতে হাঁটু পর্যন্ত ময়লা পানিতে হেঁটে অভ্যাস, এতো তাও ভালো পানি, তাই প্যান্ট ভাজ করে হাটা দিলাম। পরের দিন সকাল ৭.৩০ এ কাঠমান্ডুর বাস, আর ঢাকার প্লেন ৫ টায়। তাই হোটেলে যেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে দিলাম ঘুম। আজই আমাদের পোখারায় শেষ রাত।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।