বাইক ট্রিপ টু সাজেক (অতিমেঘের দেশে)
ঢাকা থেকে সাজেক
গত বছর সারাদিন অঝোর বৃষ্টির মধ্যে ঢাকা থেকে বাইকে করে গিয়েছিলাম সাজেক। সেই রোড ট্রিপ নিয়ে লিখেছে বন্ধু জ্যোতি বিকাশ দাস
ঢাকা
সাজেক রোড ট্রিপের শুরু মাত্র। আমার অলরেডি নিজেকে আমির খান মনে হচ্ছে। “দিল চাহতা হ্যায়” গাওয়ার চেষ্টা করছি। আমার মত বেসুরো মানুষের গান গাওয়ার উপায় হচ্ছে দুইটা। বাথরুমে আর বাইকে; নিজে ছাড়া আর কেউ শুনতে পারে না। দুই এক লাইন যা মনে আছে, বাকীটা হু হা ও ও দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছি। নিজেকে আমির খান মনে হলেও আমার বাইক নাই। আমার কাজ শুধু পিছনে বসে থাকা। সামনে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ড্রাইভারদের মধ্যে দুই নাম্বার, হুসেইন মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। বলা হয়ে থাকে বারইয়ার হাট থেকে খাগড়াছড়ি – এই রাস্তায় বাইক চালানো হল এক ধরনের ড্রাইভিং টেস্ট। আশরাফুল আলম তার ড্রাইভিং টেস্ট ভাল মতই পাশ করে গেছে।
ড্রাইভার নিজে আমাকে বৃষ্টি হবে ওয়ার্নিং দিয়ে রেইন কোট আনতে বলল। আর নিজে একটা ম্যাগি হাতা টি-শার্ট আর থ্রি-কোয়ার্টার পরে চলে আসল, নো রেইন কোট। ইহা তাকে অনেক ভুগাবে পরে।
বাইকের একটু বর্ণনা দিয়ে নেই। খুব পাওয়ার-ফুল বাইক, ম্যাক্সিমাম পাওয়ার 4.9 PS @ 7500 rpm, ম্যাক্সিমাম টর্ক 7.9 Nm @ 6000 rpm, Air cooled, Telescopic front suspension, Twin spring loaded rear suspension. এক কথায় পুরোপুরি একটা Beast. বাইকের মডেল পরে বলছি।
খাগড়াছড়ি
ঢাকা থেকে ফেনী মোটামোটি বোরিং রাস্তা। বারইয়ার হাট পার হয়ে যখন পাহাড়ি রাস্তা শুরু হয় সেটাই সবচেয়ে রোমাঞ্চকর। আমি ভাবতাম, হবিগঞ্জ-শ্রীমঙ্গলের রাস্তায় সবচেয়ে বেশী ব্লাইন্ড স্পট আছে। এখানে এসে ভুল ভাঙল। আমার ফোনে হিল ট্র্যাক রেসিং খেলতাম। এই রাস্তায় আমার মনে হচ্ছিল হিল ট্র্যাক রেসিং খেলছি সাথে থ্রিডি ফিলিংস নিয়ে।
একটা সমস্যা, রাস্তায় প্রচুর কুকুর। কখন কোনটা কোনদিকে দৌড় মারে ঠিক নাই। এবং সব কয়টা একই সাইজের, সবকয়টাই মধ্যবয়সী। কুকুরের মধ্য বয়স মানে হল ৬-৭। আজ থেকে ৬-৭ বছর আগে এখানকার কুকুর সমাজে প্রজনন বিষয়ক একটা বিপ্লব ঘটে গিয়েছিল সম্ভবত।
ফেনীতে বারইয়ারহাট পার হবার একটু পর থেকে পাহাড়ি রাস্তা শুরু। এতক্ষণ আমরা মোটামোটি ৯০ কিলোমিটার পর পর ব্রেক নিয়েছি। পাহাড়ি রাস্তায় এই সময়টা আরেকটু কমিয়ে নিলাম। নেক্সট ব্রেক রামগড়। রামগড় পৌঁছানোর আগে চা বাগান দেখে একটু অবাক হলাম, কারণ আমার ধারনা ছিল শ্রীমঙ্গল ছাড়া দেশে আর একটা গড়ে শুধু চা বাগান আছে – পঞ্চগড়। চা বাগানে পানি দেয়ার দৃশ্য অতি চমৎকার একটা দৃশ্য। বিশাল জায়গা জুড়ে অনেক গুলো Sprinkler ঘুরে ঘুরে পানি দিচ্ছে দেখতে ভাল লাগে। কিন্তু সেদিন সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল, ঐ মুহূর্তেও বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির মাঝখানে Sprinkler দিয়ে পানি দিতে হবে কেন? উপর মহল থেকে নির্দেশ ছিল মনে হয়, দুনিয়া উল্টে গেলেও পানি আজকে দিতেই হবে, নইলে খাওয়া বন্ধ।
একটা জায়গায় আমরা ব্রেক নিতে চাচ্ছিলাম। লোকালয় পার হয়ে পাহাড়ের মাঝখানে একটা জায়গায়। আশেপাশে ঐ দোকান ছাড়া কিছু নেই, ওরকম একটা জায়গায় দাঁড়ালাম। সেখানে আমার অমিতাভ বচ্চনের সাথে দেখা। দোকানের বাইরে দুইটা বেঞ্চ একপাশে, আরেকপাশে চারজন ক্যারম খেলছে। একটা বেঞ্চে একটা পিচ্চি বসা। নাম জিজ্ঞেস করলাম, অন্নু বন্নু টাইপ কিছু একটা বলল। অ আর ব মিলে আমি অমিতাভ বচ্চন বানালাম। পিচ্চির বাবা চা দিল, পিচ্চি কথা বলতেই থাকল। প্রায় ১০ মিনিট ধরে সে কি বলল আমি কিছুই বুঝলাম না।
পাশে যারা ক্যারম খেলছিল তারা মাঝে মাঝে দুই এক লাইন তর্জমা করে দিল। অমিতাভ বচ্চন এত আগ্রহ নিয়ে কথা বলছিল, আমার তার কোন কথা বুঝার দরকার ছিল না। তার চোখের দিকে তাকালেই বুঝা যায়, Such Expressive Eyes (এই উপমা অন্য কারো দেয়া)।
আমরা সকাল ৮ টায় বুয়েটের শহীদ মিনার থেকে রওনা দেই। আমাদের প্রজেক্টেড টাইম থেকে সব জায়গায় এক-দেড় ঘণ্টা পরে পৌছাচ্ছিলাম। নারায়ণগঞ্জ এর ঐদিকে জ্যাম ছিল, তাছাড়া বৃষ্টির কারণে বাইকের স্পিড কম রাখতে হচ্ছিল। আমাদের ৫ টার মধ্যে খাগড়াছড়ি পৌঁছানোর কথা। কিন্তু ৫টা বাজে যখন তখন আরও ২০ কিলোমিটারের মত বাকী ছিল। আমি বারবার গুগল ম্যাপ বের করে কত দূর দেখছিলাম।
দিনের বেলা পাহাড়ি রাস্তা যতটা সুন্দর, রাতের বেলা ততটাই বিরক্তিকর। অসংখ্য টার্ন, বাইকের লাইটে সামান্য একটু দূরেও ঠিক মত দেখা যায় না। যখন কাছাকাছি পৌঁছে গেছি তখন দেখি পাহাড়ের গায়ে তারা জ্বলছে। ঠিক যেমন সিমলায় দেখেছিলাম ওরকম। শহরে ঢুকার আগেই পর্যটন মোটেলের সাইনবোর্ড। সোজা বাইক ওইদিকে গেল। রুমের অবস্থা ভাল, রাতের খাবার খাবার জন্য দূরে যাবার মত এনার্জি ছিল না। মোটেলেই খেলাম, বাঁশ এবং খাবার দুইটাই। ৪০০ টাকায় ভাত, মুরগী আর ডাল।
সাজেক
পরদিন সকালে সাজেক এর উদ্দেশ্যে রওনা। আলমের মাথায় হেলমেটের উপর তার একশান ক্যামেরাটা লাগানো। দেখে মনে হবে মাথার উপর একটা সাপ ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। যেদিকেই যাচ্ছিলাম সেখানেই লোকজন তাকাচ্ছিল। চাটগাঁইয়া অথবা ওদের ভাষায় কিছু একটা বলে একেকজন হেসে কুটিকুটি। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম ১২০ কেজি ওজনের ড্রাইভার দেখে হাসছে। আসলে ১২০ কেজি ওজনের একটা মানুষ মাথায় একটা নাগিন নিয়ে বাইক চালাচ্ছে, হাসলে দোষের কিছু না।
দীঘিনালায় নাস্তা করেছি সকালে, রেস্টুরেন্টের মালিক জিজ্ঞেস করল কোত্থেকে আসছি। যত জায়গায় এই প্রশ্ন শুনেছি, ঢাকা থেকে সরাসরি এই বাইক নিয়ে আসছি বলা মাত্র বুকের ছাতি ফুলে যাচ্ছিল।
দীঘিনালার একটু পরেই বাঘাইহাট। ওখান থেকে আর্মি এসকোর্ট করে সবাইকে একসাথে নিয়ে যায়। বাঘাইহাট থেকেই রোড ট্রিপের আসল মজা শুরু। চমৎকার রোলার কোস্টার রাইড। কিছু জায়গায় গিয়ে নেমে উঠতে পারব কিনা চিন্তা করে আমরা কিছুক্ষণ আটকে থাকি। আল্লাহ্র নাম নিয়ে টান দেয় আলম। উঠার সময় একটা একটা করে গিয়ার কমতে থাকে। শেষে গিয়ার যখন ১ এ থাকে বাইক এক ধরনের আর্তনাদ করতে থাকে। আমি আর আলম কাম অন ম্যান, অস্থির, ভেরি গুড বলে বাইককে উৎসাহ দেই। উৎসাহে কাজ হয়, বেচারা কিভাবে জানি উঠে যায়। পাশেই চান্দের গাড়িগুলা অবলীলায় উঠে যায়।
লাস্ট পাঁচ কিলোমিটারের মত একেবারেই খাড়া। বাংলাদেশে জিগজ্যাগ রাস্তার আইডিয়া এরা ইমপ্লিমেন্ট করতে চায়নি। রোলার কোস্টার রাস্তা বানিয়েছে, আঁকাবাঁকা কিন্তু সোজা। একটার পিছনে একটা গাড়ি, যদি কোন কারণে সামনের একটা গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায় তখন পিছনের সব কয়টা গাড়ি এক্সিডেন্ট করবে। একটা জায়গায় আমাদের বাইক একটু বেশী কান্না করছিল। বেচারা আর না পেরে স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেল। খাড়া রাস্তায় বাইক তখন উল্টা যাওয়া শুরু করল। পিছিয়ে গিয়ে পৌঁছল রাস্তার কিনারে। ঝোপঝাড়ে না আটকালে কয়েক লাখ সেন্টিমিটার নিচে গিয়ে পড়তাম। বাইক আটকাতে গিয়ে আলমের পা লাগল গরম ইঞ্জিনে। এক বর্গ ইঞ্চির চেয়েও বেশী জায়গায় চামড়া উঠে গেছে। তার আশেপাশে ফোস্কা।
খাড়া অবস্থায় দুইজন নিয়ে আবার বাইক স্টার্ট করা পসিবল না। আলমকে একা আগাতে বললাম। সামনে কোথায় সমতল দেখে দাঁড়াতে বললাম। আমরা তখনো জানি না, নেক্সট সমতল মানে হল সাজেক ভ্যালি। আমার একা একা খাড়া রাস্তায় হাটা শুরু হল। বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতে রাস্তায় হাঁটার মধ্যে একটা নবাবী ব্যাপার আছে। আমি এনজয় করি বিষয়টা। কিন্তু ঐরকম খাঁড়া রাস্তায় মেন্টাল প্রিপারেশান ছাড়া হাঁটার মধ্যে কোন নবাবী ব্যাপার নাই। আছে দ্রুত নিঃশ্বাস, আর পা টাকে ভারী মনে হওয়া।
প্রায় দেড় দুই কিলোমিটারের মত হাঁটার পর আলমের দেখা পেলাম। অল্প স্লোপওয়ালা একটা জায়গা থেকে আবার যাত্রা শুরু।
সাজেক পৌঁছানোর পর প্রথম কাজ হোটেল খুঁজে বের করা। আলম খবর নিয়ে এসেছে মেঘ মাচাং নাকি ভাল। সাজেক কিংবা রক, আর্মির বানানো রিসোর্টে থাকার সামর্থ্য আমাদের নেই। লোকজন দেখল দুইটা বলদ মাথায় হেলমেট পরে একবার এপাশে আরেকবার ওইপাশে হেঁটে বেড়াচ্ছে।
আলমের ওয়াটারপ্রুফ ট্র্যাকিং শু ততক্ষণে পানিতে চপচপ করছে। মেঘমাচাং হল ইমানুয়েলস রিসোর্টের অংশ। সাজেক এর শুরুতে পাহাড়ের পাশে তিনটা টিনের ঘর আর একটা খড়ের। এক মহিলার দেখা পেয়ে আমরা রুম দেখতে চাইলাম। রুম পছন্দ হলে ভাড়া জিজ্ঞেস করলাম। মহিলা না বলে মেয়ে বলি। কারণ এর উপরে আমি অলরেডি ক্রাশড। সেই মেয়ে বলল, নরমালি ওই রুমের ভাড়া তিন হাজার, কিন্তু কোম্পানির প্রচারের জন্য আমাদের কাছে মাত্র দুই হাজার, দুই হাজার, দুই হাজার। আমি দেড় হাজার বলায় সাথে সাথে রাজী হল যখন, ভাবলাম শিট ম্যান, এক হাজার বলা উচিত ছিল। আজকের দিনে টুরিস্ট কম এইখানে।
কোনমতে দুইজন ভেজা কাপড় ছেড়ে বিছানায় যাওয়ার চেষ্টা করলাম। দুপুরের খাবার খাওয়া লাগবে। আহত আলম বাইরে যেতে চাইল না। আমি একাই বের হলাম। ভেজা গেঞ্জির উপর রেইনকোট আর হাফ প্যান্ট। শীতে কাঁপতে কাঁপতে ইমানুয়েলস হোটেলে পৌঁছলাম। খাবার নিয়ে যাবার উপায় নেই, আমি বসেই খেলাম। তখনো বৃষ্টি হচ্ছিল। মেঘমাচাং এ ফিরে আসার পর বাকীটা হচ্ছে সার্ভাইভাল স্টোরি। নরমাল দিনে থাকার জন্য ইহা অতি চমৎকার একটি জায়গা হয়ত হবে। পাহাড়ের পাশে, খুব সুন্দর ভিউ পাওয়া যাবার কথা। বৃষ্টি হচ্ছে, তাই আমরা কিছু দেখতে পারছি না। রুমের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস আসছে, জানালা একটা বারবার খুলে যাচ্ছে। উপর থেকে কয়েকটা লোকেশানে পানি পড়ছে রুমে। একটা কম্বল, তার উপর লেপ পরার পরেও শরীরের তাপমাত্রা বাড়ছিল না।
ডান্ডানামাঃ
ট্যুরের এই পর্যায়ে আমাদের নিজেদের Bear Grylls মনে হচ্ছিল। হাতের কাছে যাই পাওয়া যায় তা দিয়ে সার্ভাইভ করতে হবে। একটা ডাণ্ডা ছাড়া কিছুই পেলাম না। ডাণ্ডা আসলে বাথরুমে কাপড় রাখার ডাণ্ডা। আমরা প্রথমে এই ডাণ্ডা কাপড় ঝুলানোর হ্যাংগার হিসেবে ব্যবহার করেছি। এছাড়াও যেসব কাজে ইহা ব্যবহৃত হয়েছে তা হলঃ
- কাঠ থেকে পেরেক খোলার জন্য।
- হাতুড়ি হিসেবে। জানালার ছিটকিনি একেবারে বসিয়ে দিয়েছি। যাতে হারামি না খুলে যায়।
- দরজা আটকানোর খিল হিসেবে।
- পরের দিন টাইম ল্যাপ্স তোলার জন্য ক্যামেরা স্থির রাখার জন্য ট্রাইপড হিসেবে।
রাতের বেলা ঠাণ্ডা আরও বাড়ল। বৃষ্টির বাচ্চা তখনো কমেনি, বরং বেড়েছে। খাবার খেতে যাওয়া লাগবে। আবার ভেজা কাপড় পরলাম। কাপড় খুব একটা নেইনি আমরা, এত বৃষ্টি হবে কে জানত। পরে শুনি সাগরে চার নাম্বার বিপদ সংকেত চলে। দরজা খুলে বের হওয়া মাত্র আলম ঠকঠক করে কাঁপা শুরু করল। আমিও কাঁপছিলাম, কিন্তু দুইজন একসাথে কাঁপলে রাতের খাবার খাওয়া হবে না ভেবে ভেতরের কাঁপুনি বাইরে দেখালাম না।
আলম বাইরে যাবে না বলে আবার ভিতরে ঢুকে গেল। আমি আমার তোয়ালে আর ওর গামছা দিতে বললাম। তারপর বের হলাম, মাথায় হেলমেট পরে। সাজেক এ আগে থেকে খাবার অর্ডার না দিলে খাবার পাওয়া কঠিন। আমরা যখন বেরিয়েছি ততক্ষণে সব জায়গায় অর্ডার নেয়া শেষ। কোথাও খাবার দিতে রাজী হচ্ছিল না। একটা চায়ের দোকানে জিজ্ঞেস করলাম কোথাও খাবার পাওয়া যাবে কিনা। নেগেটিভ এন্সার শুনে চলে যাচ্ছিলাম যখন তখন এক তরুণী বলল আমার সাথে আসুন।
আলম চায়ের দোকানে বসল, আমি হাঁটলাম তরুণীর পিছন পিছন। অন্ধকারে তরুণী কই নিয়ে যাচ্ছে ঠিক নাই। এক জায়গায় খুব খাঁড়া দেখে বলল আপনি এখানে দাঁড়ান, আমি আসছি। একটু পরে তরুণী এসে জানাল, খাবার পাওয়া যাবে। ক্ষিধেয় ছটফট করা আমি তরুণীকে ম্যারি মি বলে প্রপোজ করব নাকি ভাবছিলাম। আবার তার পিছন পিছন সেই চায়ের দোকানে। সেই পাহাড়ি তরুণী সেই দোকানেই চা বানায়। দুই কাপ করে কফি আর এক কাপ করে চা খেলাম। আলম এক্সট্রা এক কাপ চা খেল।
আবার রুমে ফিরে ঘুম। সারারাত কুকুর বিড়ালের মত বৃষ্টি হল। ভোর বেলা বৃষ্টি নাই। আলমের ডাকে বিছানা ছেড়ে বারান্দায় গেলাম। ঐ এক মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল এখানে আসা সার্থক। সাজেক দেখার জন্য এই রিসোর্টের বারান্দার চেয়ে আর ভাল কিছু হতে পারে না। এরপর আবার কখন বৃষ্টি আসবে ভেবে বের হয়ে গেলাম। শীতের কাপড় নাই। বিছানা থেকে কম্বল দুইটা গায়ে জড়িয়ে বের হয়ে গেলাম। বাইরে লোকজন দেখে বলছিল বালিশ নিয়ে বের হলাম না কেন?
এরপর আমাদের সাজেক থেকে ফিরে আসার পালা। আসার পথে রোদ উঠছিল। আকাশকে হারামজাদা ইত্যাদি যত খারাপ গালি দিতে দিতে খাগড়াছড়ি পৌঁছলাম। আবার সেই পর্যটন মোটেল। সেখানে আবার রাত কাটানো। আলম সারারাত জ্বরে প্রলাপ বকছিল। ফেরত আসার জার্নি সবসময়ই বোরিং। বাই দ্যা ওয়ে, আমাদের বাইক ছিল Dayun Plight, 110 cc. এই বাইক নিয়ে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি ২৮০ কিলোমিটার, সেখান থেকে সাজেক ৬৭ কিলোমিটার। অত কঠিন কিছু না, ১৫০ সিসি বাইক নিয়ে খুব সহজেই সাজেক এ একটা বাইক ট্রিপ মারা যাবে।
ট্যুরের একটা পর্যায়ে দার্শনিক হয়ে যাই। আমাদের লাইফ দুইরকম হতে পারে। সমতল রাস্তার মত, কোন ঝুঁকি নেই, গ্যাস-পানির বিল দিয়ে দিয়ে কেটে যাবে কোন রকম। অথবা হতে পারে পাহাড়ি রাস্তার মত। অনেক উঁচুনিচু, অনেক ঝুঁকি, যেকোন সময় স্টার্ট বন্ধ হয়ে বাইক পিছনে যাওয়া শুরু হতে পারে। কিন্তু সামনে আছে সাজেক এর মত কিছু একটা। যেখানে সকালবেলা মেঘ মাচাং থেকে মেঘ দেখা যায়, দূরে সরে যাচ্ছে।
অন্যান্য রোড ট্রিপ গুলো
লেখা ভালো লাগলে নিচে শেয়ার বাটনে ক্লিক করে শেয়ার করুন
পরবর্তী লেখা গুলোর আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
ziad khan
khb e shundor kre liksen… dandanama ta diye lekhai onno matra jog krsen….bt ektu khabarer bornona dile aro valo hoto,,,,shtti,,,,khb e valo lagse bhaiya…. evabe chaliye jaan
admin
আপনার ভালো লাগছে শুনে ভালো লাগলো। আর খাবার আসলে বলার মতো তেমন কিছু ছিল না, কোনমতে পেটে দিসি আরকি, তাই কিছু লেখা হয় নাই 😛
Khairul Islam Pranto
joss bhaiya <3
admin
ধন্যবাদ। ব্লগে সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন পরবর্তি লেখা গুলোর জন্য, সামনে আরো বড় বাইক রাইডের কাহিনী আসিতেছে 🙂